ঢাকা | নভেম্বর ১৭, ২০২৪ - ৭:৫৭ অপরাহ্ন

পেঁয়াজের বাম্পার ফলনেও চাষিদের মুখে হাসি নেই

  • আপডেট: Tuesday, April 19, 2022 - 11:38 pm

কলিট তালুকদার, পাবনা থেকে: পেয়াাঁজের রাজধানী খ্যাত উত্তরের জেলা পাবনায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও পেঁয়াজ চাষিদের মুখে নেই তৃপ্তির হাসি। কারন কাঙ্খিত দাম পাচ্ছে না কৃষক। যে দাম পাচ্ছে তাতে করে আবাদের খরচই উঠছে না বলে জানান কৃষকেরা।

কয়েক মাস আগে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও দাম পায়নি কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, লাভ তো দূরের কথা, বীজ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে উৎপাদন খরচই উঠছে না। তাই বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আসামাত্রই ব্যাপারীরা যে দাম বলছেন, তাতেই বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।
পাবনার হাজিরহাট, পুষ্পপাড়াহাট, বনগ্রাম হাট, আতাইকুলা, সুজানগর হাট, সাঁথিয়া বাজার, ধুলাউড়ি হাট, বেড়ার চতুরহাট, দুবলিয়ার হাটসহ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যান, করিমন, অটোরিকশা, ট্রলিসহ বিভিন্ন পরিবহনে পেঁয়াজ নিয়ে বাজারে আসছেন কৃষকেরা। তেমন ক্রেতা না থাকায় তাঁদের হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ৪৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে তাহেরপুরী, ফরিদপুরীসহ নানা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন। আর গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে।

জেলার সুজানগর ও সাঁথিয়ার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরম উপেক্ষা করে পেঁয়াজ তুলছেন কৃষকরা। বসে নেই চাষিদের পরিবারের অন্য সদস্যরা। নারী-শিশুরা ভোর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পেঁয়াজের মাথা কাটার কাজে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে পেঁয়াজের মাথা কাটা। সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের আলী হোসেন জানান, এবার তিনি ২৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে যে দাম, তাতে উৎপাদন খরচই তুলতে পারব না। এমন দাম থাকলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষ করবেন কি না ভাবছেন তিনি।

সুজানগরের ভায়না গ্রামের কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রামাণিক জানান, এবার ২০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছে। এক বিঘা জমিতে কীটনাশক খরচ ৩ হাজার টাকা, সার ও চাষ বাবদ ৫ হাজার টাকা। শ্রমিক খরচ ১৫ হাজার টাকা। আর লিজ নিয়ে চাষ করলে নিতে হয় ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৪০ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মন, বাজারে ৬০০ থেকে ৮৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। তাতে প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

সুজানগর হাটে পাইকারি ক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজের আমাদানী, কিন্তু চাহিদা কম। তাই দাম কম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ বছর কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে আছি।

কয়েকজন কৃষক বলেন, ভরা মৌসুমেও আমদানি করা পেঁয়াজে বাজার সয়লাব। কম দামের বিদেশি পেঁয়াজ বাজারে থাকায় আমাদের দেশি পেঁয়াজের চাহিদা কম। আমদানি কিছুটা কমিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে যদি সংরক্ষণ করে, তাহলে কৃষকরাও লাভবান হতো। পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার তৈরি করতে আজও কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম একটু নিম্নমুখী। তবে পেঁয়াজগুলো যদি সংরক্ষণ করে কিছুদিন পরে বিক্রি করে, তাহলে কৃষকরা ভালো দাম পেতেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের সঠিক দাম পান, এ জন্য সরকারি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই পাবনায় একটি বড় আকারের পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা সম্ভব হবে।