ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে অনেক ভবন
স্টাফ রিপোর্টার: চারতলা ভবনটির সামনের অংশের নিচে মাটি নেই। ভবনে ঢোকার সিঁড়িটি ধসে পড়তে পারে যে কোন সময়। ধসে পড়া ঠেকাতে সিঁড়ির স্লাবের নিচে একটি বাঁশ দিয়ে ঠেকা দেওয়া আছে। ভবনের বাসিন্দারা এর ওপর দিয়েই চলাচল করছেন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য খনন করায় রাজশাহী মহানগরীর ফিরোজাবাদ এলাকার ভবনটির এমন দশা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাজশাহী নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর থেকে আমচত্বর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত করছে। এরসঙ্গেই চলছে সড়কের দুপাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ। এফ কনস্ট্রাকশন ও রানা বিল্ডার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে। এখন ড্রেনের জন্য খনন করা হচ্ছে একেবারেই ভবন ঘেঁষে। এতে অনেক ভবন ঝুঁকিতে পড়েছে। ভবনের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে আমচত্বর থেকে বড়বনগ্রাম পর্যন্ত সড়কের একপাশে ড্রেন নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এখানেই ড্রেনের জন্য খনন করা হয়েছে ভবন ঘেঁষে। সিটি করপোরেশন বলছে, ড্রেন নির্মাণের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে আইন দেখিয়ে সওজ বলছে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ নেই।
নগরীর নওদাপাড়া, শালবাগান, ফিরোজাবাদ ও আমচত্বর এলাকায় সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, সওজের ড্রেনের জন্য গভীর করে খননের ফলে অনেকের ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। চলাচলের পথও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। কোথাও কোথাও চলাচলের জন্য দু’একটি মাচা দেওয়া হলেও বেশিরভাগকেই চলতে হচ্ছে ভিন্ন উপায়ে ঝুঁকি নিয়ে। শালবাগান এলাকায় সড়কের পাশে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের মহাস্থান রেজিমেন্টের সদর দপ্তরের প্রধান ফটকও বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেনের খননের ফলে।
শালবাগান এলাকার একটি বহুতল ভবনের নাম ‘কৃষি পল্লী’। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আবাসনের জন্য কিছুদিন আগে ভবনটি করেছেন। কিন্তু সওজের ড্রেনের জন্য কয়েকদিন আগে ভবনের সামনে খনন করা হলে মাটি সরে গেছে। ভবনের সামনে বেজমেন্টের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির চারপাশ থেকে মাটি সরে গেছে। চরম ঝুঁকিতে কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিটি। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এ এলাকায় কালিপদ সাহা নামের এক ব্যক্তির চারতলা ভবনের সামনে ড্রেনের জন্য খনন করা হয়েছে। ফলে এই ভবনটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। খনন করার কারণে ভবনের নিচতলায় থাকা রডের গুদাম থেকে রড বের করা যাচ্ছে না। গুদামটি কিছুদিন ধরে বন্ধই আছে। কালিপদ সাহার ব্যবস্থাপক জ্যেতিষ কুমার বলেন, ‘এমনভাবে ড্রেনের কাজ হচ্ছে যে বিল্ডিংই ঝুঁকিতে পড়েছে। গুদামটা যে খুলব তারও উপায় নেই। একটা মাচাও দেয়নি চলাচলের জন্য।’
নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুল হকের দোতলা ভবনের বারান্দায় ফাটল ধরেছে ড্রেনের জন্য খনন করায়। তিনি বলেন, ‘কোন রকম প্রটেকশন ছাড়াই কাজ করা হচ্ছে। এতে আমাদের ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়েছে। মনে হচ্ছে বারান্দাটা ভেঙে পড়বে। ভেঙে না পড়লেও নতুন করে না করলে টিকবে না। যারা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সওজকে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সওজের রাজশাহীর সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী হাইওয়ে থেকে ১০ মিটার, মানে প্রায় ৩৩ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এই আইন না মেনে ভবন নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় ভবন মালিকেরই। আমাদের কিছু করার নেই।’
তিনি জানান, প্রায় পাঁচ ফুট গভীর করে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ডেনের প্রস্থও পাঁচ ফুট। এ কারণে গভীর করে মাটি কাটতে হচ্ছে। তাই কিছু স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে নগরীর আমচত্বর থেকে বড়বনগ্রাম এলাকায় সড়কের পাশে রাসিকও প্রায় একই রকম ড্রেন নির্মাণ করছে। সেদিকেই অনেক স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়েছে। বড়বনগ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে এখনও ফাটল। তোফাজ্জল বলেন, দেয়ালের পাশে মাটি কাটার কারণে এমন ফাটল হয়েছে। তিনি বাড়ির পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে ধসে পড়া দেওয়াল দেখিয়ে বলেন, কাজের সময় এই দেয়ালটাও ভেঙেছে। নিজ খরচে নতুন করে পিলার দিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে রাসিকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, এ ধরনের ক্ষতি হলে আমরা ক্ষতিপূরণ দেব। সেই ক্ষমতা আমাদের আছে। তোফাজ্জলের বিষয়টা জানা নেই। তিনি চাইলে তাকেও ক্ষতিপূরণ দেব। আমরা অনেককেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে একটু ক্ষতি হলেও মানুষকে বুঝিয়ে আমরা কাজটা করছি।