ঢাকা | মার্চ ১৮, ২০২৫ - ৬:২৫ পূর্বাহ্ন

পানামা-প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে তদন্ত কেন এগোলো না?

  • আপডেট: Monday, April 18, 2022 - 8:00 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: ‘পানামা পেপার্স’ ও ‘প্যারাডাউস পেপার্স’ কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশি যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছিল তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকাজ থেমে আছে। মানিলন্ডারিং আইনে এখতিয়ার না থাকার কারণে পানামা পেপার্স বা প্যারাডাইজ পেপার্সের মতো কেলেঙ্কারির অনুসন্ধান করা যাচ্ছে না বলে দুদকের সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।

২০১৬ সালের মে মাসে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি আর প্যারাডাইস কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে পরের বছর নভেম্বরে। নথি ফাঁসের এই আলোচিত কাণ্ডে বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেই তথ্য বেরিয়ে আসে।

পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসে বাংলাদেশের ৬১ ব্যক্তি ও আটটি প্রতিষ্ঠানের। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মূলত জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা পাচারে মাধ্যমে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে।

আলোচিত এই কেলেঙ্কারির পর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথকভাবে অভিযুক্তদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।

অভিযুক্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে অন্তত এক ডজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। ২০১৬ সাল থেকে ছয় বছর ধরে চলে আসা এই তদন্তের বিষয়ে হাইকোর্টের এক আদেশের পর ২০২১ সালের ২৯ মার্চ দুদক আদালতে একটি লিখিত জবাব দেয়।

দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ওই লিখিত জবাবে দুদক বলেছে, ‘পানামা পেপার্সে যেসব ব্যাক্তিবর্গের তথ্য পাওয়া গেছে বা নাম এসেছে তাদের কেউ পবলিক সারের্ভন্ট নয়।’

দুদকের জবাবে আরও বলা হয়, মানিলন্ডারিং আইন-২০১২ এ ২৮টি প্রিডিকেট অফেন্সের মধ্যে মাত্র ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ নিয়ে দুদক কাজ করে। অভিযোগটি দুদকের তফসলি বহির্ভূত বিধায় অনুসন্ধান কাজে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(ঠ) সম্পৃক্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল একটি অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র অনুসন্ধানের এখতিয়ার রয়েছে দুদকের। দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি, প্রতারণা, শুল্কসংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের এখতিয়ার রাখা হয়নি।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মানিলন্ডারিং আইনে এখতিয়ার না থাকার কারণে দুদক পানামা পেপার্স বা প্যারাডাইজ পেপার্সের মতো বড় বড় অর্থ কেলেঙ্কারির অনুসন্ধান করতে পারছে না।

দুদক কমিশনার জহুরুল হক সম্প্রতি দুদকে আইনের সংশোধন ও সাতটি বিষয়ে কাজ করার অনুমতি চেয়ে মন্ত্রিপরিষদে চিঠিও দিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আইনের সংশোধন আনা হলে দুদকের জন্য অনেক কাজই করা সহজ হবে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ে দুদকের কাজ করার এখতিয়ার সীমিত। কিন্তু সাধারণভাবে মনে হবে দুদকে কেন এটা করছে না ওটা করছে না? তফসিলভুক্ত না হওয়ার কারণে দুদক অর্থ পাচারের এসব বিষয়ে কোনো কাজ করতে পারছে না।’

পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম

বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরীন ফাতেমা আউয়াল, পুত্র তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, তাজওয়ার মো. আউয়াল। তালিকায় নাম আছে মোগল ফরিদা, শহিদ উল্লাহ, চৌধুরী ফয়সাল ও আহমাদ সামিরের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফরুল্লাহ ও তার স্ত্রী নীলুফার জাফরুল্লাহ, মোবাইল ফোন কোম্পানি সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী, আইজিডাব্লিউ অপারেটর সেল টেলিকমের কফিল এইচ এস মুয়ীদ, এক্সেসটেলের মালিক জাইন ওমর, কিউবির অংশীদার আফজালুর রহমান, টেকনোমিডিয়ার সরকার জীবন কুমার, বাংলাট্রাকের আমিনুল হক ও তার ছেলে নাজিম আসাদুল হক এবং তারিক একরামুল হকের৷

সিটিসেলের সাবেক চেয়ারম্যান আজমাত মঈন, আব্দুল মোনেম গ্রুপের এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম এবং আসমা মোনেম। দিলীপ কুমার মোদি, মল্লিক সুধীর, কাজী রায়হান জাফর, মো. ইউসুফ রায়হান রেজা, মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, ইসরাক আহমেদ, নভেরা চৌধুরী, সৈয়দা সামিনা মির্জা, উম্মে রুবানা, বিলকিস ফাতিমা, সালমা হক, ফরহাদ গনি মোহাম্মদ, মো. আবুল বাশার, নিজাম এম সেলিম, মোহাম্মদ মোকসেদুল ইসলাম, মো. মোতাজ্জারুল ইসলাম, মো. মোতাজ্জারুল ইসলাম, মো. সেলিমুজ্জামান, সৈয়দ সেরাজুল হক, এফ এম জুবাইদুল হকের।

নাম রয়েছে ক্যাপ্টেন এম এম জাউল, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, খাজা শাহাদত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, মোহাম্মদ শহীদ মাসুদ, জুলফিকার হায়দার, মির্জা এম ইয়াহিয়া, নজরুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, এফ এম জুবাইদুল হক, এ এফ এম রহমাতুল বারী ও খাজা শাহাদাত উল্লাহর৷

বাংলাদেশ বিমান ইনকর্পোরেশন, ইসলামিক সলিডারিটি শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ ইনকর্পোরেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল এজেন্সিস লিমিটেড, এসার বাংলাদেশ হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিডেট ও টেলিকম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়।

এছাড়া স্টেফান পিরকার ও রুখসানা পিরকার নামের দুই ব্যক্তির নামে গুলশানের একই ঠিকানায় সোয়েন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, অপরটি সেভেন সিজ অ্যাসেটস লিমিটেড নামে দুটি অফশোর প্রতিষ্ঠানের নামও এসেছে। এছাড়া বিবিটিএল নামে আরও একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তালিকায় নাম আসার দিলিপ কুমার মোদীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

Proudly Designed by: Softs Cloud