ঢাকা | মে ২, ২০২৫ - ৯:২৮ অপরাহ্ন

নিমঘুটু যাবেন বলেও গেলেন না বিএমডিএ চেয়ারম্যান

  • আপডেট: Sunday, April 17, 2022 - 8:59 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কৃষকের আত্মহত্যার তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। বিষয়টি আলোচিত হয়েছে দেশব্যাপী। ঢাকা থেকে অনেকে গিয়েছেন দুই কৃষকের বাড়িতে। কিন্তু রোববার দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই যাননি গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান।

দুই কৃষকের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাঁওতালদের সংগঠকদের গত বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যান বলেছিলেন, শনিবার (১৬ এপ্রিল) তিনি তিনি নিমঘুটু যাবেন। তবে তিনি যাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। দুই কৃষকের মৃত্যুর পর ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে বলা হচ্ছিল, তাঁরা চোলাই মদ পানে মারা গেছেন। কিন্তু শনিবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চোলাই মদ নয়, বিষপানেই মারা যান ক্ষুদ্র জাতিসত্তার দুই কৃষক।

গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন তাদের পানি না দিয়ে ঘোরাচ্ছিলেন। চোখের সামনে বোরো ধানের খেত ফেটে চৌচির হতে দেখে দুঃখে তারা আত্মহত্যা করেন।

ঘটনার পর থেকে নানা সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটিও কর্মসূচি পালন করছে। তারা ঘটনার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। ৩৫ গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কৃষাণ-কৃষাণিদের নিয়ে বরেন্দ্র ভবনও ঘেরাও করেছেন। তারপর রক্ষাগোলার সঙ্গে ১৪ এপ্রিল নিজের দপ্তরে বসেছিলেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান আখতার জাহান।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, কৃষকদের সঙ্গে বিএমডিএ’র যোগাযোগের ঘাটতির কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে। নিবিড় যোগাযোগ থাকলে এটা হতো না। ঘটনার দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন। পরেও তাঁকে দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় থাকতে হয়েছে। তাই তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। তবে ১৬ এপ্রিল তিনি ঘটনাস্থলে যাবেন। শেষপর্যন্ত তিনি যাননি।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য নিরঞ্জন কুজুর, কাথারিনা হাঁসদা ও রঞ্জিত পাহাড়িয়া। তারা বলেছেন, ঘটনার পর এখনও বিএমডিএ’র উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিমঘুটু যাননি। অথচ ঢাকা থেকেও অনেকে এ গ্রামে এসেছেন। পরিবারকে সান্তনা জানিয়েছেন বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান না যাওয়াটা কৃষকদের প্রতি অবহেলারই প্রকাশ।

একই কথা বলেছেন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব আরিফ ইথার। তিনি বলেন, বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ম্যাডাম আমাদের ডেকে বলেছিলেন, তিনি নিমঘুটু যেতে চান। দিনক্ষণও ঠিক হয়েছিল। পরে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ফোন করে জানিয়েছেন, শনিবার যাওয়া হচ্ছে না। পরে গেলে জানানো হবে। কিন্তু আর কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, দুই কৃষকের মৃত্যুর পর অনেক অপপ্রচার চালানো হয়েছে যে তারা চোলাই মদ পানে মারা গেছেন। কিন্তু তারা যে বিষপানেই মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। এখন মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলেও পুলিশ বলছে। কিন্তু এতদিন কর্মকর্তারা যেভাবে মৃত কৃষকদের নামে অপপ্রচার চালিয়েছেন তার প্রতিবাদে আমরা এবার কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। বিএমডিএ চেয়ারম্যান এতদিনেও ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহানকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচারক আবদুর রশীদ বলেন, ‘একটু ব্যস্ততার কারণে চেয়ারম্যান ম্যাডাম গোদাগাড়ী যেতে পারেননি। তবে যাবেন।’ কবে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দিন ঠিক হলে আপনাদের জানানো হবে।’

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS