ঢাকা | মে ১, ২০২৫ - ৯:০৭ অপরাহ্ন

ঈদে সড়ক ব্যবস্থাপনা ‘কোমায় চলে যেতে পারে’

  • আপডেট: Sunday, April 17, 2022 - 6:08 pm

অনলাইন ডেস্ক: এবার ঈদযাত্রায় গণপরিবহণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুন মানুষ বেড়ে যাবে। সড়ক পরিবহণে সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ যাত্রী বেড়ে গেলে অসহনীয় যানজটের ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি কোমায় চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রবিবর সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিছায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ঈদের চার দিনে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা থেকে বের হন। ওই চার দিনে ঢাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ লোক বের হন। কিন্তু ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহণের মাধ্যমে যাত্রী বহনের সক্ষমতা অর্ধেকেরও কম। যে কারণে বাকি অর্ধেক মানুষ বাড়ি যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ মোটর বাইকে, কেউ বাসের ছাদে আবার কেউ লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে আরোহণ করেন। এর ফলে ঘটে দুর্ঘটনা।

হাদিউজ্জামান বলেন, ‘পরিবহণ সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন মানুষ যখন রাস্তায় নেমে পড়ে, তখন ট্রাফিক পুলিশ নামান, কিংবা যত ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন সেটা আর কাজে আসে না। কাজে আসার কথাও নয়। কারণ ফর্মাল ওয়েতে আমাদের পরিবহণ সক্ষমতা ১৩ থেকে ১৪ লাখ। কিন্তু যাত্রী ৩০ লাখ। বাকি ১৬ লাখ মানুষ তো কোনো না কোনোভাবে বাড়ি যাবেই। কিন্তু তাদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা নেই।’

রাজধানী থেকে পরিবহণ সক্ষমতার একটি চিত্র তুলে ধরে বুয়েটের এই শিক্ষক বলেন, ‘সড়ক পরিবহণে আমাদের প্রতিদিন আট লাখ যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা রয়েছে, নৌ পথে দেড় লাখ, ট্রেনে প্রতিদিন পরিবহন করতে পারে এক লাখ যাত্রী, ব্যক্তিগত পরিবহণে চার লাখ। এই সাড়ে চৌদ্দ লাখের বেশি পরিবহণের সুযোগ নেই। এছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরও চার লাখ লোক ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করে।

বুয়েটের এই সড়ক ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ঈদের সময়ের চাপ কমানোর জন্য বিকল্প ধারণাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২৫ রোজার পরে সবাই একসঙ্গে বাড়িতে না গিয়ে পরিবারের যে সদস্যরা কাজ করে না তাদেরকে আগিয়ে পাঠিয়ে দিন। সবাই একসঙ্গে গিয়ে বিপদে পড়ার চেয়ে ধাপে ধাপে লোক পাঠালে সেই চাপ কিছুটা কমবে।’

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মুক্তির কারণে এবারের ঈদে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এতে ২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, সব রুটের প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় ভরাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এবার রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে।’

তাই এখন থেকেই রাজধানীর সব পথের ফুটপাত রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলো বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, টঙ্গী রেলস্টেশন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা, কাঞ্চন ব্রিজ, গাবতলী মাজার রোড, মীরের ধৌর, আশুলিয়া, ইপিজেড, চন্দ্ৰা, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, হাতিরঝিল, মহাখালী, রামপুরা, শেখের জায়গা, আমুলিয়া, ডেমরা, সুলতানা কামাল ব্রিজ, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর, মেঘনা টোল, ভুলতা, গাউছিয়া, বরপার মতো ব্যস্ত সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহণ নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হয়। এসব দিকে নজর দিতে হবে।’

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ এবং পরিবহন সংকটের সুযোগে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু পরিবহন মালিক-চালক মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করে মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবার সবপথে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হবে।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS