ঢাকা | নভেম্বর ১৭, ২০২৪ - ৫:২২ পূর্বাহ্ন

‘সেচের পানির অভাবে কৃষকের আত্মহত্যা দেশের জন্য অশনিসংকেত’

  • আপডেট: Wednesday, April 13, 2022 - 11:13 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীতে দুজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত মতবিনিময়সভায় তিনি এ দাবি করেন। সভায় আলোচকরা চাষের পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

সংসদীয় ককাসের চেয়ারম্যান ফজলে হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ‘রাজশাহীতে দু’জন আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যা এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ পরিস্থিতি ও পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সভায় মূল আলোচনা উত্থাপন করেন প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণেশ মাঝি প্রমুখ। সভায় কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন বিমলচন্দ্র রাজওয়ান ও আশরাফুল হক তোতা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপি মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সেচের পানির অভাবে ভারতে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আফ্রিকার কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানির অভাবে কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশে সেচের পানির জন্য দুজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা এটাই প্রথম। এটি দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। সেজন্য আসল ঘটনা উদ্ঘাটন করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং সেচ প্রকল্পে অব্যবস্থাপনার চিত্র উদ্ঘাটনের জন্য সঠিক তদন্ত করা উচিত।

তিনি বলেন, দরিদ্র কৃষকদের সেচের জন্য পানি দেওয়া হবে না, আর প্রভাবশালীদের সেচের জন্য পানি দেওয়া হবে- এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সেচ প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের টিউবওয়েল অপারেটর সাখাওয়াতের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কারণ তিনি বলেছেন, পানি দেব না। আর কৃষক বলেছেন, পানি না দিলে বিষ খাব। জবাবে অপারেটর সাখাওয়াত যে কথা বলেছেন, আগে বিষ খা তারপর পানি দেব। এতেই প্রমাণ হয় কৃষক দু’জনকে অপারেটর সাখাওয়াত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন। এ জন্যই বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উদ্ঘাপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া উচিত।

পানির ওপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পানি ব্যবস্থাপনায় আদিবাসী কৃষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বরেন্দ্রসহ সব অঞ্চলে সমবায় ভিত্তিতে পানি ও চাষের ব্যবস্থাপনা করার প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, সমগ্র উত্তরাঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ফাঁদ ও দুর্বৃত্তায়ন দেখে মনে হয়েছে, বরেন্দ্র প্রকল্প ১৬টি জেলায় নতুন এক শোষক শ্রেণির জন্ম দিয়েছে। এরা অনেকটা একদিকে ভূমি সামন্ত, অন্যদিকে পানি সামন্তে পরিণত হয়েছে। পানি নিয়ে প্রতিটি স্তরে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মূল বক্তব্যে ড. মেজবাহ কামাল বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আবহমানকালের নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রধান গ্রাম নদী ও পানি এবং নদীপথ বর্তমানে তৃতীয় সংকটের মুখে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ সবগুলো নদী এখন চরম নাব্যতাসংকটে ভুগছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মধ্য দিয়ে একসময়কার প্রবল প্রবহমান ছোট নদীগুলোর অধিকাংশই শুকিয়ে মরে গেছে আর না হয় মরে যেতে বসেছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা। কৃষি এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এই অঞ্চলের নদীগুলোর উজানের দেশগুলোর একতরফা পানি প্রত্যাহার করার কারণে দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের নদীগুলোর অধিকাংশেরই পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধানে ভারতবর্ষ তথা গোটা দেশের পানি ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। ভূপৃষ্ঠের পানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার সুপারিশ করেন তিনি।