ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৫:৪২ অপরাহ্ন

শোধ করবে না বৈদেশিক ঋণ, নিজেকে খেলাপি ঘোষণা শ্রীলঙ্কার

  • আপডেট: Tuesday, April 12, 2022 - 7:41 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কা ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পারবে না বলে জনিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটি নিজেকে ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষণা দিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটি যেসব বিদেশি সরকার ও সংস্থা থেকে বিভিন্ন সময় ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণদাতারা চাইলে এখন থেকে সেই ঋণ ক্যাপিটালাইজ করতে পারে। এর মানে হলো প্রাপ্য সুদের পরিমাণকে মূলধনের সঙ্গে যোগ করা কিংবা ঋণের অর্থ শ্রীলঙ্কান মুদ্রায় পরিশোধের বিকল্প বেছে নেওয়া।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি. নন্দলাল ওয়েরাসিংহ বলেন, ‘আমাদের অত্যাবশ্যকীয় আমদানির ওপর ফোকাস করতে হবে এবং বাহ্যিক ঋণ প্রদানের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। এটি এমন এক পর্যায়ে এসেছে যে ঋণ পরিশোধ করা চ্যালেঞ্জিং এবং অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

ওয়েরাসিংহ আরো বলেছেন, ঋণদাতা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির সমর্থনে একটি চুক্তিতে না আসা পর্যন্ত অর্থ প্রদান স্থগিত করা হবে।

মূলত জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করতে গিয়ে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একেবারে তালানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

শনিবার রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শ্রীলংকার অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে তিন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ দরকার শ্রীলঙ্কার। তেল, বিদ্যুৎ, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই তা প্রয়োজন।

জরুরী ঋণের জন্য সোমবার বৈশ্বিক ঋণদাতার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বিশ্বব্যাংক থেকেও সহায়তা চাওয়ার কথাও জানিয়েছেন সাবরি। এছাড়াও এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকে সহযোহিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জ্বালানির জন্য ভারতের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে শ্রীলঙ্কা। যা দিয়ে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ চলা যাবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করছে দেশটি।

অর্থমন্ত্রী জানান, জুলাই মাসে বন্ডের এক বিলিয়ন ঋণ শোধের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হবে। সরকার প্রয়োজনে বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

তবে এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীরা রাষ্ট্রপতি রাজাপকসে গোতাবায়ার পদত্যাগকেই একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন। বিরোধী দল এনপিপির এমপি অনুরা কুমারা দিশানায়েকে বলেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ছাড়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার হাতে এক মাত্র পথ হলো পদত্যাগ করা। দেশের জনগণও এখন এটাই চায়। এর বাইরে আমরা আর কোনো প্রস্তাব মানতে রাজি নই।

অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলংকা ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানী এবং বিদ্যুতেরও চরম সংকটে পড়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির কারণে শ্রীলংকায় বিক্ষোভ চলছে।

চলমান সংকট সামাল দিতে শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ব্যতিত মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যের সকলে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ইতোমধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

অপরদিকে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হওয়ায় দেশটির শেয়ারবাজারের কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।