ঢাকা | নভেম্বর ২৭, ২০২৪ - ৬:৪৫ পূর্বাহ্ন

বদলগাছীর ছোট যমুনা নদীর তলদেশে চাষ হচ্ছে বোরো ধান

  • আপডেট: Tuesday, April 12, 2022 - 9:35 pm

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ছোট যমুনা নদীতে পানি শুকিয়ে জেগেছে চর। শুকনো মৌসুম ছাড়াও এই নদীতে পানি না থাকায় ভূমিহীন মানুষ চরে বোরো ধানের চাষ করছেন।

বদলগাছীর এক সময়ের খরস্রোতা ছোট যমুনা নদীতে এখন চলছে বোরো ধানের চাষাবাদ। নদীটি এখন ফসলের খেতে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এতে জেলেরা মাছ শিকার বাদ দিয়ে চলে যাচ্ছে ভিন্ন পেশায়।

জানা গেছে, বদলগাছীর ছোট এই যমুনা নদীতে জেলেরা একসময় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদীতে এখন পানি না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন এলাকার প্রায় দুই শতাধিক জেলে পরিবার। জেলেরা এখন তাঁদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভ্যান ও রিকশা চালাচ্ছেন। এছাড়া তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই পানিশূন্য নদীতে ধান চাষ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বদলগাছী উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে ভূমিহীন কৃষকেরা বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন। এখানে অন্য ফসলের আবাদ না হলেও বোরোর চাষ করে অনেক দরিদ্র কৃষক তিন-চার মাসের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। খরচ কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা।

বালুচরে বোরো ধানের চাষ করতে সেচের পানি না লাগলেও অধিক ফলনের আশায় কৃষকেরা রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছেন বেশি করে। ফলে কৃষকের অভাব মিটলেও হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য। নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী।

যমুনা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মিলন, রবি বলেন, তারা আগে তাঁদের বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। এখন নদীতে পানি না থাকায় অন্য কাজ করেন। তবে তিনি এখনো পুরোনো পেশায় ফিরে যেতে চান। তাঁর দাবি, খনন করে আবারও নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।

ডাঙ্গিসাড়া এলাকার নদীর পাড়ের বাসিন্দা বাবু বলেন, এই নদীর পানি দিয়ে সারা বছর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করা যেত। বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার জন্য পানির কোনো চিন্তাই করতে হতো না। কিন্তু এখন আর নদীতে সেচ দেওয়ার মতো পানি নেই। নদীর বুকে চাষ করা হচ্ছে বোরো ধান।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, একসময় এই নদীতে সারা বছর জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন নদীতে পানি না থাকায় তাঁরা আর মাছ ধরতে পারছেনা। এ ছাড়া নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর পানি দূষণসহ পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে গেছে। তাই থেমে গেছে নৌকা চলাচলও। আর নদীর আশপাশের জমির ফসলে কীটনাশক দেওয়ার ফলে নদী হারাচ্ছে দেশীয় মাছ ও জলজ প্রাণী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, বর্তমান সময়ে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে নদীগুলো তাঁর রূপ হারিয়ে ফেলেছে। আর সেই সুযোগে কৃষকেরা সেখানে চাষাবাদ শুরু করেছেন। এতে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। তবে নদী খনন করা খুব জরুরী।

নদী খনন ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সারা দেশের নদী খননের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে বদলগাছীর ছোট যমুনা নদীর নামও রয়েছে। প্রস্তাবনাটি পাস হলেই তাঁরা এই নদী খননের কাজ শুরু করবেন। যাতে নদীতে সব সময় পানি থাকে।