জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি অপারেটর সাখাওয়াত
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার পর গ্রেপ্তার গভীর নলকূপের চাকরিচ্যুত অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেছেন, দুই কৃষকের বিষপানের ঘটনা তার গভীর নলকূপের সামনে ঘটেনি। গত ৬ ও ৭ এপ্রিল কারাফটকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাখাওয়াত।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম রোববার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে হওয়ায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দুটি তদন্ত করছেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুল হক। আদালতে আসামিকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়ে তিনি দুইদিন তাকে জেরা করেছেন।
জেরার সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে কৃষকদের পানিবন্টনে অনিয়ম, সিরিয়াল না মানা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সাখাওয়াত কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি। তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চেয়েছিলেন পানি কোন কৃষককে কতদিন পর দেওয়া হচ্ছে তা খাতায় লেখা হয় কি না এবং একজন কৃষককে যে সিরিয়াল অনুযায়ীই পানি দেওয়া হয়েছে তার নিশ্চয়তা কি। জবাবে সাখাওয়াত জানিয়েছেন, খাতায় কিছু লিখিত নেই। সিরিয়াল কীভাবে নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে সাখাওয়াত সদুত্তর দিতে পারেননি।
ওসি জানান, ঘটনা তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এলে বিএমডিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই গভীর নলকূপের আওতায় ২১৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে চাষ হয়েছে ২৬৫ বিঘা। সাখাওয়াত ও বিএমডিএ’র হিসাব কেন মিলছে না সে প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি চাকরিচ্যুত এই অপারেটর।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে সাখাওয়াত দাবি করেছেন, কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি কোথায় বিষ খেয়েছেন তা তিনি জানেন না। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গোদাগাড়ী এলে স্থানীয় এক ভ্যানচালক বলেছেন, গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন অভিনাথ। তখন অপারেটর সাখাওয়াতই তাকে ভ্যান নিয়ে যেতে দেখে ডাকেন। এরপর তারা দুজনে মিলে অভিনাথকে নলকূপের সামনে ভ্যানে তুলে তার বাড়িতে এনে নামিয়ে দেন। আর রবি একাই নলকূপের সামনে থেকে হেঁটে বাড়ি এসেছিলেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন তার ভাই সুশীল মারান্ডি।
গত ২৩ মার্চ নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ ও তার চাচাতো ভাই রবি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবার দাবি করছে, বোরো ধানের জমিতে পানি না দেওয়ার কারণে তারা দুজনে বিষপান করেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেটর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে দুইদিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে বিএমডিএ আলাদা একটি কমিটি করেছিল। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বিএমডিএ’র তদন্ত প্রতিবেদনে সাখাওয়াতের নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। তাই গ্রেপ্তারের দিনই সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করে বিএমডিএ। নলকূপে পানি নিয়ে হয়রানির কথা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এলেও কেন দুই কৃষক বিষপান করেছেন সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তাই দুই কৃষকের পরিবারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।