মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে নিহতের মামলায় আটক ১৭
চারঘাট প্রতিনিধি: মসজিদের বারান্দায় বিশাল পাত্রে ইফতারের জন্য রান্না করা খাবার। পাশেই পড়ে আছে জগ, গ্লাসসহ ইফতারের কাজে ব্যবহ্রত নানা সামগ্রী। মসজিদ তালাবদ্ধ, আশে পাশের পুরো এলাকা জনশূন্য। শনিবার সকালে চারঘাটের জোতকার্তিক আদর্শ গ্রাম জামে মসজিদে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। অথচ এই মসজিদেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একদিন আগে শুক্রবার ঠিক ইফতারের মুহুর্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় স্থানীয় দুই পক্ষ।
সংঘর্ষে খোকন আলী নামে এক ব্যক্তিকে ধাঁরালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। খোকন আলী জোতকার্তিক গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের আরো চারজন গুরুতর আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানায়, চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্তিক আদর্শ গ্রাম জামে মসজিদের কমিটি নিয়ে কামরুজ্জামান মুকুল ও মুক্তার আলী নামে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল দির্ঘদিন থেকে। কামরুজ্জামান মুকুল ও মুক্তার আলী দুজনেই নিজ গ্রুপের মধ্য থেকে মসজিদের সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য দুই দলে বিভক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে কয়েক মাস পূর্বে মুকুলের লোকজন মুকুলকে সভাপতি করে মসজিদের কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু মুক্তার ও সেলিমসহ আলাদা একটি পক্ষ সেই কমিটিকে প্রত্যাখান করে তাদের লোকজন নিয়ে স্থানীয় এক আম বাগানে অস্থায়ী মসজিদ স্থাপন করে নামাজ আদায় করে আসছিল।
প্রত্যক্ষদোর্শীরা জানান, শুক্রবার দুই পক্ষই ইফতারের আয়োজন করে। পূর্বের ওই বিরোধের জেরে ইফতারের মুহুর্তে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের ধাঁরালো হাসুয়ার আঘাতে মুক্তারের পক্ষের খোকন আলী নিহত হয়। এ ঘটনায় খোকন আলীর পিতা মোজাহার আলী (৫৫) ও মুকুলের পক্ষের সিরাজুল ইসলাম (৪৫)সহ চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
চারঘাট মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মসজিদ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে নিহত খোকন আলীর স্ত্রী রুপা খাতুন। মামলায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের প্রধান ও ওই মসজিদের সভাপতি কামরুজ্জামান মুকুলকে প্রধান আসামি করে সর্বমোট ৩৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত এজাহার নামীয় ১৭ জন আসামিকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, জোতকার্তিক ওই মসজিদ নিয়ে দুই পক্ষের ভেতরে কয়েক মাস যাবত দ্বন্দ্ব চলছিল। ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় দুই পক্ষকে নিয়ে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে একাধিকবার বৈঠকের আয়োজন করলেও তাঁদের জেদাজেদির কারণে কোনো সমাধান হয়নি। দুই পক্ষই নিজেদের সিদ্ধান্তে সব সময় অনড় ছিল। এজন্যই শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্বটা হত্যাকান্ডে রুপ নিয়েছে।
এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে খুনের ঘটনায় থানায় মামলা রুজু হয়েছে। ইতিমধ্যে এজাহার নামীয় আসামী ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। আটককৃতদের শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।