নানা অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা, পালাতে গিয়ে এক সপ্তাহে আটক ৭৮৭

অনলাইন ডেস্ক: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন শতশত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে গিয়ে ৭৮৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বিশাল একটি অংশ জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের অনেকেই খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা ক্যম্প থেকে বের হওয়ার সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মানবপাচারকারি চক্র। ইতোমধ্যে এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বুধবার ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর সময় ১২৮ জনকে আটক করা হয়। ওইদিন রাতে আরও ১৫২ জনকে আটক করে এপিবিএন। আগের দিন মঙ্গলবার উখিয়া স্টেশন থেকে ৮০ জনকে আটক হয়। গত সোমবার পুলিশের হাতে আটক হন ১৮৪ রোহিঙ্গা। একইদিন আরও ৫০ জনকে আটক করে টেকনাফ থানা পুলিশ। তবে আটকদের বেশির ভাগই কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২১ মার্চ সোনাদিয়া থেকে ১৪৫ জন এবং ২৫ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে নারী-শিশুসহ ৪৮ রোহিঙ্গা আটক হন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ মোরশেদ বলেন, পুলিশের হাতে আটক রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্র মতে, গত ২১ মার্চ মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে উদ্ধার হন ১৪৫ রোহিঙ্গা। পাচারকারি চক্র মালয়েশিয়া বলে তাদের সোনাদিয়ার চরে নামিয়ে লাপাত্তা হয়। এছাড়া ২৫ মার্চ টেকনাফের বাহারছড়া উপকূলে ট্রলারের কুটরি থেকে নারী-শিশুসহ ৪৮ জনকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এপিবিএন সূত্র জানায়, ১৬ এপিবিএনের দায়িত্বাধীন সাতটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশ ও বাহির পথে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হয়।
ক্যাম্প ছেড়ে পালানো রোহিঙ্গারা টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অল্পমূল্যে কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পের বাইরে আসা রোহিঙ্গারা সস্তায় শ্রম বিক্রি করে। তারা বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও চালকের সহকারী বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ বাসাবাড়িতে গিয়েও কাজ করছে বলেও তথ্য রয়েছে। এতে স্থানীয় শ্রমজীবীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের যোগাযোগ গড়ে ওঠায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান বলেন, আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের বসবাস। সে হিসেবে আমাদের সদস্য সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। এপিবিএন ১৪, ১৬ এবং ৮ তিনটি ব্যাটালিয়ন মিলে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা মাত্র ২ হাজারের মতো। ক্যাম্পের বিশাল এরিয়ায় কাঁটাতারের বেরা দেওয়া হয়েছে। কাঁটাতারের সব জায়গায় গাড়ি বা পায়ে যোগাযোগও দুরূহ। কিন্তুরোহিঙ্গারা সহজে কাঁটাতারের নিচে চলাচলের পথ তৈরি করে বাইরে চলে যায়। খবর পেলে আমরা ক্যাম্প ইনচার্জকে (সিআইসি) জানিয়ে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করি।
তিনি আরও বলেন, আবার বেশকিছু এলাকায় রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ করা হয় ক্যাম্পের বাইরে। তখন তাদের সেখানে যেতে দেওয়া লাগে। এখান থেকেও অনেকে কাজের সন্ধানে চলে যায় বলে খবর পাই। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে।
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ দৌজা নয়ন বলেন, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও তারা সচ্ছল জীবনের আশায় বা অপরাধে জড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।