ঢাকা | অক্টোবর ২৩, ২০২৪ - ৭:২৮ অপরাহ্ন

বোরোতে সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ

  • আপডেট: Friday, April 8, 2022 - 10:42 pm

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নিয়ামতপুরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর ও ব্যক্তি মালিকানাধীন অপারেটরদের বিরুদ্ধে সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ কৃষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎস ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে নলকূপ মালিকরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের দিনের পর দিন হয়রানি করে থাকে। এসব বিষয়ে কোন কৃষক অভিযোগ করলে, সেচ যন্ত্রের অপারেটররা প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগকারী কৃষকের বিরুদ্ধে হয়রানি আরো বেড়ে যায় বলেও জানা গেছে।

নিয়ামতপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কার্যালয় ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর নিয়ামতপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরোধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি বিএমডিএর অধীনে এবং বাঁকিগুলো ব্যক্তি মালিকানা সেচযন্ত্রের অধীনে চাষ হচ্ছে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সব ইউনিয়নেই প্রায় সেচ কমিটির নির্ধারিত ফির থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে কৃষকদের সাথে অপারেটরদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকছে। এরপরও অপারেটররা প্রভাবশালী হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ প্রদানে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের টিটিহার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি ব্যক্তি মালিকাধীন সেচযন্ত্রের আওতায় কৃষকের নিকট থেকে ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে প্রতি বিঘা হিসেবে। এরপরও কারো কিছু বলার নেই। এ এলাকার (টিটিহার) কৃষক আব্দুস সামাদ। তিনি জানান, দেড় বিঘা জমিতে বোরোধান লাগিয়েছেন তিনি।

২৫শ টাকা করেই বোরোর জমিতে সেচ প্রদান করছেন। তিনি আরো জানান, এ এলাকায় প্রায় সব কৃষকই সেচের জন্য ৩ হাজার টাকা প্রদান করছে। তবে সেচের রেট যে এত কম, তা আমরা আগে জানতে পারিনি। বোরো মৌওসুম শুরুতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মাইকে সেচের মূল্য প্রচার করলে সব কৃষকের জন্যই ভালো হতো মন্তব্য করেন তিনি। তবে বেশী অর্থ কেন আদায় করা হচ্ছে জানতে চাইলে অপারেটর ইমরান আলী বাবু জানান, এ এলাকার পানির স্তর অনেক নীচু। পাম্পের সাহার্য্যে পানি তুলতে অনেক গভীর পর্যন্ত বোরিং করতে হয়। এসমস্ত কারনেই বিদ্যুৎ খরচ বেশী পড়ে। তাই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে একটু বেশী নিচ্ছেন এ এলাকার অপারেটররা।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর উপজেলা সেচ কমিটির সভায় বোরো মৌসুমে ব্যক্তগত সেচযন্ত্রের মাধ্যমে উপজেলার হাজিনগর, নিয়ামতপুর, রসুলপুর ও পাঁড়ইল ইউনিয়নে ১৬শ টাকা এবং চন্দননগর, ভাবিচা, শ্রীমন্তপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ১৪শ টাকা বিঘা প্রতি নির্ধারণ করা হয়।

নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বুধুরিয়া গ্রামের কৃষক ছায়েদ আলী, ইস্কান্দার মন্ডল, গফুর মন্ডল, আনারুলসহ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের গ্রামে গভীর নলকূপের কোনো অপারেটর বিঘাপ্রতি ১৮০০ টাকা, আবার কোনো অপারেটর ১৬০০ টাকা করে আদায় করছেন। অথচ উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চন্দননগর ইউনিয়নে বিঘাপ্রতি ১৪০০ টাকা করে সেচের পানির রেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতেই অগ্রিম ১ হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়। তা না হলে সেচের পানি পেতে কৃষকেরা নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন।

চন্দননগর গ্রামের ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপের মালিক মোস্তফা আলী প্রতি বিঘা জমিতে সেচের জন্য ১৮০০ টাকা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন কৃষক। মোস্তফা আলী বলেন, ‘সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্য তাঁকে কেউ জানাননি। এছাড়া এই এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপের সব মালিকেরা বিঘাপ্রতি ১৮০০-২০০০ টাকা করে নিচ্ছেন, তাই আমিও নিচ্ছি।’

কৃষকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের মাঝে নায্যমূল্যে সেচের পানি বন্টনের জন্য সেচ কমিটি করে দেওয়া আছে। ওই সব সেচ কমিটির ভূগর্ভস্ত পানির স্তর অনুযায়ী একেক এলাকার জন্য একেক ধরণের সেচ রেট নির্ধারণ করে দেন। গভীর নলকূপের অপারেটর ও মালিকেরা সেচ কমিটি নির্ধারিত রেটে কৃষকদের মাঝে সেচের পানি দেওয়ার কথা। কোনো অপারেটর কিংবা মালিক সেচ কমিটি নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে থাকলে ওই সব এলাকার কৃষকেরা ডকুমেন্ট সহকারে অভিযোগ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

নিয়ামতপুর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল¬াহ আল মামুন বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি কেউ সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী আদায় করে থাকেন তবে কৃষকদের নিকট থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।