নিরাপদ পানি সংকট: বছরে ডায়রিয়ায় মৃত্যু প্রায় ২ লাখ
অনলাইন ডেস্ক: ডায়রিয়া রোগ শিশু মৃত্যু এবং অসুস্থতার একটি প্রধান কারণ। দেশে প্রতি বছর ডায়রিয়াজনিত রোগের কারণে প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানিয়েছে ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ নামে একটি সংগঠন।
গবেষণার বরাত দিয়ে সংগঠনটি বলছে, গত বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গিয়েছিলেন মাত্র ৬০০ জন। কিন্তু চলতি বছর এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ জনে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বর্তমান জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনের সদস্য সচিব ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা দিয়েছে এইভাবে, ‘স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক মঙ্গলজনক অবস্থা যা নিছক রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়।’ সেই অর্থে স্বাস্থ্য একটি মৌলিক অধিকার।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা কি বলতে পারি এই দেশের নাগরিকরা এই সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকে উপভোগ করতে পারছি? আমরা কি এই অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেছি? রোগ বা দুর্বলতার জন্য আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকি। মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার কথা উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শারীরিকভাবেও কি আমরা সুস্থ?
টেকসই অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং দরিদ্র বিমোচনের জন্য সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য জানিয়ে ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৬৪ লাখ মানুষ শুধুমাত্র ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়িত জীবন এবং স্বাস্থ্য এই তিনটিই জনস্বাস্থ্যের মৌলিক উপাদান, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়।
ডা. রাব্বানী বলেন, দেশের যেকোনো উন্নয়নের জন্য পরিবেশের প্রধান উপাদান যেমন; বায়ু, জল এবং মাটি বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মুনাফার আকাঙ্ক্ষায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে বাংলাদেশ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন।
প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর কারণ হিসেবে নিরাপদ পানি সংকট, অনিরাপদ খাদ্য, সংক্রামক ব্যাধি ও প্রতিষেধন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি, পুষ্টি সমস্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দেখছে সংগঠনটি।
নিরাপদ পানি সংকটের কথা উল্লেখ করে ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, নিরাপদ পানির অধিকার অন্য সব মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। ডায়রিয়া রোগ শিশু মৃত্যু এবং অসুস্থতার একটি প্রধান কারণ। দেশে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায় ডায়রিয়াজনিত রোগের কারণে।
ডা. রাব্বানী বলেন, ২০২১ সালের মার্চ মাসে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে একদিনে ৭৫০ জনের চিকিৎসা দেয়া হয়। এই বছর হাসপাতালটি ১৩ মার্চ থেকে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান শহরের বাসিন্দাদের সরবরাহকৃত পানি পান করার আগে ফুটিয়ে নিতে বলেছেন।
বাংলাদেশে ৪১ শতাংশেরও বেশি মানুষ উৎস থেকেই মল-দূষণসহ সুপেয় পানি পান করে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ পরিবারের মধ্যে দুটি, অর্থাৎ জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ, রোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা দূষিত উৎস থেকে পানি পান করে। কিন্তু গৃহস্থালিতে দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের কারণে, জীবাণু দূষণসহ পানীয় জল পান করা লোকের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।
বন্যা, ভূমিধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘন ঘন দুর্যোগের সময় সুপেয় পানির উৎসও দূষিত হয়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ৮৩ শতাংশ শহুরে এবং ৭২ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাঙ্গণেই উন্নত পানির ব্যবস্থা আছে। প্রবেশাধিকার এবং গুণমান উভয় ক্ষেত্রেই ধনী ও দরিদ্র পরিবার মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। ধনীদের তাদের প্রাঙ্গণেই সুপেয় পানির উৎস তৈরি করে অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারগুলোকে বাইরের উৎস থেকে পানি সংগ্রহের জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে বাধ্য হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ, ডা. ফয়জুল হাকিম লালা, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার প্রমুখ।