কী আছে প্রস্তাবিত বৈষম্যবিরোধী আইনে
অনলাইন ডেস্ক: সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সবার সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে ‘বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২’ সংসদে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আইনটি সংসদে তোলেন। বিলটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
কী আছে এই বৈষম্যবিরোধী আইনে?
কোনো ব্যক্তি যদি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা ও অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করেন, তাহলে তা প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী বৈষম্যমূলক বলে গণ্য হবে-
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা থেকে বঞ্চিত করলে; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে; কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রি অথবা বিপণনে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে;
প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গ হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করলে; প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে;
উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যেকোনো ধরনের বৈষম্য করলে;
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাত, মজুরি বা সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধিনিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য বা চাকরিচ্যুত করলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন, তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা দেওয়া হলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতিনীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্মগ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়িভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানানো বা অমত করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করলে;
গ্রাম্য সালিশ বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একঘরে, সামাজিকভাবে বয়কট বা হয়রানি করলে;
তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামীপরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করলে;
স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে;
কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা দেওয়া এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার লাভে বঞ্চিত করলে।
বৈষম্যবিরোধী আইনে একটি মনিটরিং কমিটির কথা বলা হয়েছে। এর সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্তত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন, শ্রেণি-পেশা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হবেন। এই কমিটি প্রতি তিন মাসে অন্তত একটি বৈঠক করবে।
কোনো বৈষম্যমূলক কাজ ঘটলে ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা প্রথমে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করতে পারবে। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। এ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
বিভাগীয় কমিটি প্রতিকার না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবে। এ কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জাতীয় কমিটিও যদি প্রতিকার করতে না পারে তবে আদালতে মামলা করতে পারবে ভুক্তভোগী। মামলা দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। তবে প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় নিতে পারবে আদালত।