ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১২:২০ অপরাহ্ন

পোরশার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তাল পূনর্ভবা এখন বালুচর

  • আপডেট: Tuesday, April 5, 2022 - 10:18 pm

এম রইচ উদ্দিন, পোরশা থেকে: নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের উত্তাল পূনর্ভবা নাব্যতা হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে খরা মৌসুমে এর তলদেশ যেমন খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তেমনি গরু ছাগলের চারন ভূমিতে পরিনত হয়েছে।

নদীটিতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য নৌকা, লঞ্চ, ষ্টিমার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ দেশের অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। ওইসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা বড়বড় হাট বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলিতে ধান,পাট,আলু,বেগুন,সরিষা,কালাই,গমসহ বিভিন্ন পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন।

শুধু পন্যই নয় হাটবাজার গুলিতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি। সে সময় পূনর্ভবা ছিল পূর্ন যৌবনা। সে সময় এ উপজেলার ব্যবসায়ীরা একমাত্র নদিপথ হিসাবে ব্যবহার করে তারা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভীত গড়ে তুলেছিল। শুধু হাটবাজার নয়, নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ।

এর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজ ফসল ফলাতো। ফলে ফসলে ভরে উঠতো মাঠের পর মাঠ। আবার ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পূনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রাম গুলিতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। জীবিকার নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো।

সময় গড়িয়ে চলার সথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পূনর্ভবা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। জেলে পরিবার গুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। পাড় গুলো হয়েছে কৃষি জমি। নদী গর্ভে জেগে উঠা চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবল সহ বিভিন্ন খেলা। এক সময়ের ব্যবসা বণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা। নদী কেন্দ্রীক সম্ভবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি।

খরা মৌসুমে সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত বালুচরে পরিণত হতো না। তাছাড়া নদীটি কখনও খনন বা রক্ষণাবেক্ষনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর খরা মৌসুমে নদিটিতে পানি না থাকায় স্থানীয় ভাবে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তেলন করে অনেকেই ধান চাষ করছেন। পুরাতন এই নদিটি খনন না করে এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পূনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন।