জনগণের প্রভু ভাবা যাবে না, সেবক হতে হবে: কর্মকর্তাদের সিইসি
অনলাইন ডেস্ক: দক্ষতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করলে পুরো কমিশনকে দায় নিতে হবে। আর সেটি যেন না হয় সেই জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের ‘প্রভু’ নয় ‘সেবক’ হয়ে কাজ করতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনের উপায় নির্ধারণ শীর্ষক এক কর্মশালায় সিইসি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে একথা বলেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ আয়োজিত কর্মশালায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে মনে করি না। আমরা তো মনে করি এত বড় একটি চাকরি করি আমরা তো জনগণের প্রভু।’
কিছু মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর তা না হলে পুরো নির্বাচন কমিশনকে বদনামের দায়ভার নিতে হবে।
কাজ করতে তদবির করতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবদিক থেকে আমাদের নৈতিক অধঃপতন হয়েছে। আমাদের সব কাজে তদবির করতে হয়। যখনই আমরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে চাকরি পাই জনগণকে নিজেদের অধীন হিসেবে চিহ্নিত করি। কিন্তু আমাদের প্রভুর মতন আচরণ করলে চলবে না। আমাদের অন্তর দিয়ে জনগণের সেবক-ভৃত্য হিসেবে নিজেদের মেনে নিতে হবে।’
জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভুল বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পাসপোর্ট ও ভোটার আইডিতে নামের ভুল। কারেকশনের ক্ষেত্রে কিন্তু চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে তা নয়। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু বিভিন্নভাবে মানুষ হয়রানির শিকার হয়।’
সিইসি বলেন, ‘এটার (এনআইডি) আদিমত্ব আছে, আমরা সিনেমাতে দেখেছি যে আদিকালে রাজা বা সম্রাট তার দূত পাঠাতেন অন্য সম্রাটের কাছে, উনি সেখানে গিয়ে তার পরিচয়পত্র পেশ করতেন। পরিচয়ের কিন্তু প্রয়োজন আছে, সেটার আবশ্যকতার অস্বীকার করার উপায় নেই। আইডেন্টিটি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু ব্যাপক।’
এসময় সিইসি তার স্কুলজীবনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমার জীবনে আইডি কার্ডের শুরু হয়েছিল ক্লাস সিক্স থেকে। তখন স্কুল থেকে ছবিযুক্ত দুই পাতার আইডেন্টিটি ছিল। তখন আইডেন্টিটি কার্ডের প্রয়োজন ছিল দুটি ক্ষেত্রে— একটি বাসে অর্ধেক ভাড়া নিতো আর সিনেমা হলে দেখতে গেলে স্টুডেন্ট পরিচয় দিলে অর্ধেক পয়সায় আমরা সিনেমা দেখতে পারতাম। এরপর যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন আমি ক্লাস টেন-এ পড়ি। তখন এটাকে ডন্ডি বা ডান্ডি কার্ড বলা হতো।’
পাকিস্তানিরা আইডেন্টিটি কার্ড উচ্চারণ করতে পারত না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ওইটাকে ডন্ডি কার্ড বা ডান্ডি কার্ড বলতাম। তখন একটি ডান্ডি কার্ড রাখতে হতো যে আমি যে মুসলমান বা হিন্দু নই— এটা প্রমাণের জন্য। অ্যাডভোকেট হিসেবে আইডেন্টিটি কার্ড পেয়েছিলাম, তারপর যখন সহকারী সচিব হলাম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব হিসেবে পেয়েছি। জয়েন সেক্রেটারি হিসেবে পেয়েছি। এখনও আমার একটি ভ্যালিড আইডেন্টিটি কার্ড আছে সিনিয়র সচিব হিসেবে। ২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত এটার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবির। ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অন্য নির্বাচন কমিশনাররাসহ নির্বাচন কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।