রাজশাহীতে ব্যাংকের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জমি দখলের চেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীতে এক ব্যক্তির প্রায় ৩৪ কাঠা জমির একটি অংশে ব্যাংকের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে পুরো জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এরশাদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের এক ভাই খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহুর সহযোগিতায় হাবিবুল্লাহ আল ইমরান নামের ওই ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টা করছেন বলে দাবি মূল মালিকের।
ভুক্তভোগী হাবিবুল্লাহ আল ইমরনের দাবি, স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগীতায় খায়রুল ইসলাম তার দাগের জমি অবৈধ ভাবে দি প্রিমিয়ার ব্যাংক রাজশাহী শাখার কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী জমির মালিক প্রিমিয়ার ব্যাংক লি, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি অভিযোগও করেছেন।
এদিকে হাবিবুল্লাহ আল ইমরান তার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি রাজশাহী নগরীর সুলতানাবাদ এলাকার মৃত ইমরান আলীর ছেলে। পৈত্রিক সূত্রে তাদের প্রায় ৩৪ কাঠা জমি রয়েছে বড়বনগ্রাম এলাকায়। কিন্তু জমিটির একটি অংশ (০.০৪৯৫ একর) এরশাদ এ্যান্ড ব্রাদার্স কোম্পানী লিমিটেডের আরেক ভাই খায়রুল ইসলাম তার একটি ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত নেয়ায় ওই জমিতে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে সেই সাইনবোর্ডে যে দাগ নং দেয়া রয়েছে তা ওই জমির নয় বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী হাবিবুল্লাহ। খায়রুল ইসলামের দাগ নম্বর ৩০২৩ ও ৩০২৬ আর হাবিবুল্লার জমির দাগ নং ৩০২৭ ও ৩০২৫। ব্যাংক ঋণও নেওয়া হয়েছে ওই ৩০২৩ ও ৩০২৬ দাগের সম্পত্তির ওপর। কিন্তু ব্যাংকের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে ৩০২৭ ও ৩০২৫ দাগে। মূলত এই দাগের জমিটি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে অবৈধভাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু হাবিবুল্লাহ’র ৩৪ কাঠা ওই জায়গাটি দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন। এনিয়ে তাকে নানা সময় হুমকি-ধামকিও দেয়া হয়েছে। যে বিষয়ে তিনি পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন। দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লি. রাজশাহী শাখার অনুকূলে খায়রুল ইসলাম বড়বনগ্রাম মৌজার ৩০২৩ ও ৩০২৬ দাগের একটি জমিসহ অন্যান্য জমি জামানত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে মেসার্স টাইলস ফ্যাশানের নামে বড় অংকের ঋণ নিয়েছেন। অথচ সেই কাগপত্রে দেখা গেছে জামানত দেয়া ওই জমিটি খায়রুল ইসলামের নয়।
জমির মালিক হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, আমার ৩৪ কাঠা পুরো জমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এমনকি নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছেন কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু এবং খায়রুল ইসলাম। অথচ খায়রুলের জমিই নয় সেটি। তারা এভাবেই মানুষের জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। রাজশাহী নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু বলেন, আমি কারো জমি দখলের চেষ্টা করছি না। তবে ২৪ কাঠার ওই জমিটি আমার কাছে বিক্রি করার কথা রয়েছে। কিন্তু কারা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে বলতে পারবো না।
দি প্রিমিয়ার ব্যাংক রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপকের দাবি, ওই জমিটি ১২ বছর পূর্বে বন্ধক রেখে খায়রুল ইসলাম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স টাইলস ফ্যাশানের নামে ঋণ নেন। অভিযোগকারী ব্যাংকে এসেছিলেন তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদেরকে জানানো হয়েছে উভয় পক্ষ মিলে বসে জমির দাগ অনুসারে জমি মেপে দেখতে। যাদি অভিযোগকারীর জমি হয় তবে তিনি বুঝে নেবেন। আর টাইস ফ্যাশান ঋণের বিপরীতে ব্যাংককে বন্ধক হিসেবে তার অন্য জমি বুঝিয়ে দেবে বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাইরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার একটি ঘোনিষ্ট সূত্রের, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। এরশাদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো তদন্ত করছে।