নির্যাতিত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বাবাকে অধ্যক্ষ বললেন মরেনি তো!

স্টাফ রিপোর্টার: ছেলের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় বহুল আলোচিত-সমালোচিত ইসলামিক বক্তা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এক ব্যক্তিকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের বিষয়ে কথা বললে রাজ্জাক তার বাবাকে বলেছেন, ছেলে মরেনি তো! শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডে এমন কথা বলতে শোনা গেছে তাকে।
আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ রাজশাহীর পবায় একটি মাদ্রাসা চালান। এই মাদ্রাসায় রাজ্জাক বিন ইউসুফের ছেলে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাত ছাত্রকে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। আব্দুর রহমান নিজেও একজন ইসলামিক বক্তা এবং এই মাদ্রাসার শিক্ষক। বাবা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক আব্দুর রহমানের ভাইয়ের ছেলে সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর টাকা চুরি করে। তারা এর অভিযোগ করলে চাচা আব্দুর রহমান সাত শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। এ নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে নগরীর শাহমখদুম থানায় আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রাজ্জাক বিন ইউসুফ ওই শিক্ষার্থীর বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টুকে ফোন করে হুমকি দেন।
শুক্রবার সকালে এর তিনটি অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। রাজ্জাক রাজ্জাক বিন ইসসুফ বলেন, ‘আমি জানতে পারলাম না মামলার কাগজ আমার হাতে আসলো। আমার অসন্তুষ্ট থাকাটায় আপনার ছেলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ। আল্লাহর গজব থেকে আপনার ছেলেটাকে রক্ষা করার জন্য এখন আপনার সহজ পথ- কোথায় গেলে মামলা উঠে যাবে সেটা করা।’ আরেক রেকর্ডে শোনা যায় শিশুর বাবা রেন্টু বলছেন, ‘একটা শিশুকে কি পরিমাণে মারা হলে সেই শিশুটা বমি করতে পারে, মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে?’ জবাবে রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলছেন, ‘এক বাড়িতেও মানুষ মারা যায়! আপনার ছেলে তো বেঁচে আছে! আপনি কোর্টে কত দিন চলবেন চলেন, আপনি মনে করবেন না যেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইসসুফের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শেষ কথা, আপনি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হোন।’
তৃতীয় রেকর্ডে রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলছেন, ‘আপনি কি এটা প্রতিশোধের জন্য মামলা করেছেন?’ জবাবে রেন্টু বলছেন ‘না না, আমার ছেলের সাথে অন্যায় হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে বক্তা রাজ্জাক বলছেন, ‘তাহলে তো আপনার সাথে এত কথা বলে হিসাব করতে পারলাম না। ঠিক আছে, আল্লাহ আপনার ছেলেকে ধ্বংস করুক। হারিয়ে যাক। আল্লাহ এই ব্যবস্থা করে দিবে। আপনি মামলা চালান।’
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলেন, ‘মানুষের ছেলের ক্ষতি করবো এটা আমরা কামনা করি না। সেই শিক্ষার্থীর বাবাকে কল দিয়েছিলাম। কি বলেছিলাম মনে নাই।’ নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা মেরাজুল ইসলাম রেন্টু বলেন, পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করছে না। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা শুধু আব্দুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলারও তদন্ত চলছে। মামলার বাদীকে হুমকির বিষয়ে কিছু জানি না।’