ঢাকা | মে ১৮, ২০২৪ - ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

ভিটায় ফিরতে পারেনি গোদাগাড়ীর উঠিয়ে দেওয়া চার পরিবার

  • আপডেট: Wednesday, March 23, 2022 - 11:14 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের চার পরিবারের ২০ সদস্য এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি। তাঁরা কেউ মসজিদে, কেউ প্রতিবেশী, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকছেন। এদিকে আগুন ধরিয়ে ভেকু দিয়ে বাড়িঘর ভাঙার পর লুটপাতের অভিযোগে আদালতে করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। আদালত অভিযোগটি গোদাগাড়ী থানাকে সরাসরি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে গত ৬ মার্চ গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনসহ চার পরিবারের ১১টি ঘর পুড়িয়ে দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এর তিন দিন পর গত ৯ মার্চ পুনরায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে ভেকু দিয়ে সবকিছু ভেঙে চুরমার করা হয়। ৬ মার্চ থেকে খোলা আকাশের নিচে ১০ দিন থাকার পর বাড়ির ২০ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় থাকছেন।

এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ায় গত ৮ মার্চ জেলা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন আদালতে মামলা হয়। মামলায় ১০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে ২৪ কাঠা জমি গাহানু সরদারের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকায় বায়না করেন জালাল উদ্দিন। তখন গাহানু জমি বিক্রির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে অনুমতির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোদাগাড়ী ভূমি কার্যালয়কে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বলা হয়। গাহানু কিছুদিন পর মারা যান। এ কারণে তখন জমির কবলা দলিল করা যায়নি। তখন গাহানুর ছেলে জহুর লাল ও মহর লাল প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না। পরে জহুর ও মহল প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাঁদের কাছ থেকে জমিটি কেনার চেষ্টা করেন।

কিন্তু জহুর ও মহর তা মানছিলেন না। ৬ মার্চ সকালে জহুর ও মহর কয়েক শ মানুষ নিয়ে বাড়ি দখল করতে আসে। তাঁদের হাতে ছিল লাঠি, ফালা, কুড়াল, কোদালসহ দেশীয় অস্ত্র। তাঁরা প্রথমে বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে। তখন বাড়ির সদস্যরা ভয়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেদিন বাড়িঘরগুলো ভেঙে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে আবার তিন দিন পর দুপুরে ভেকু নিয়ে এসে বাকি যা ছিল সেগুলোও তছনছ করে দেওয়া হয়। সেদিনও আরেক দফা আগুন দেওয়া হয়।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসন্তপুর গ্রামে ২৪ কাঠার ওই জায়গায় বাড়ির কোনো চিহ্ন নেই। বাড়ি ভাঙার মাটি পড়ে আছে। সেখানে দেখা হয়, গোদাগাড়ী থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে। তাঁরা ছবি তুলছিলেন। প্রতিবেশী কয়েকজন বলছেন, তাঁরা এখানে ১০-১২ দিন খোলা আকাশের নিচে ছিলেন। পরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন।

ওই বাড়ির মালিক জালাল উদ্দিনকে পাওয়া গেল এলাকার একটি মসজিদে। তিনি ওই মসজিদে থাকছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর এক ভাইয়ের বাড়িতে আছে। তিন ছেলে বউ-বাচ্চারা বাপের বাড়ি চলে গেছে। ছেলেরাও বিভিন্ন জায়গায় থাকছেন। বাড়ি থেকে সবকিছু লুটপাত হয়ে গেছে। হাতে কিছু নেই। এলাকার মানুষ যে খাবার দিচ্ছে, তাই খাচ্ছেন। এই অবস্থা কত দিন চলবে, তিনি বুঝতে পারছেন না।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. লুৎফর রহমান বলেন, দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালত পুলিশকে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তদন্তের নামে আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, আদালত অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা এটা এজাহারভুক্ত করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।