ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১২:৫৮ অপরাহ্ন

খন্ডকালীন শিক্ষকে চলছে সরকারি কলেজের পাঠদান

  • আপডেট: Wednesday, March 16, 2022 - 10:46 pm

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোন রকমে চলছে উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের এইচ.এস.সি, ডিগ্রী ও অর্নাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।

করোনাকালীন শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পুরোদমে পাঠদান শুরু হলেও শুধু শিক্ষক সংকটের কারনে ব্যহত হচ্ছে প্রতিদিনের পাঠদান। দীর্ঘদিন ধরে নেই ইংরেজী বিভাগের কোন শিক্ষক। নেই গণিত রসায়নসহ আরো পাঁচটি বিভাগের একজন করে শিক্ষক। এমতাবস্থায় শিক্ষক পূরণের উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখা নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।

কলেজ সুত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে কলেজটি। বর্তমানে এ কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। কলেজে এইচএসসি, ডিগ্রীসহ চালু রয়েছে অনার্সের বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, ব্যবস্থাপনা ও হিসাব বিজ্ঞান আটটি বিভাগ। ২০১৮ সালের ৮আগষ্ট জাতীয়করণ হয় কলেজটি।

জানা গেছে, বিগত সাত বছরের মধ্যে এ কলেজ থেকে একে একে অবসরে চলে যান সাত শিক্ষক। অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা হলেন, ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক নুরুল ইসলাম, দেওয়ান আহসান হাবীব, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ইব্রাহীম, রসায়নের সহকারী অধ্যাপক জগবন্ধু সার্টিয়ার, অর্থনিতীর সহকারী অধ্যাপক ইসতিয়াক আহম্মেদ চৌধুরী, হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম ও দর্শনের সহকারী অধ্যাপক আতাউর রহমান।

কলেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, এ কলেজ থেকে অবসর নেওয়া ইংরেজীর প্রভাষক নুরুল ইসলাম এইচএসসি ১ম বর্ষের শ্রেণি পাঠদান দিচ্ছেন। আলাপচারিতায় তিনি জানান, ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী এ কলেজ থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর ২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান আরেক শিক্ষক আহসান হাবীব। ফলে কলেজটিতে ইংরেজীর শিক্ষক শুন্য হয়ে পড়ে। কলেজের এ দূরবস্থা দেখে তিনি বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে পাঠদান করাচ্ছেন।

কথা হয় এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থী মুন্নি খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, একটি সরকারী কলেজে দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক একেবারে শুন্য থাকবে এটি ভাবতেও অবাক লাগে। এরপরও কলেজ কর্তৃপক্ষ খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে যে পাঠদান করাচ্ছেন তাতে উপকৃত হচ্ছেন তারা। আর এজন্য তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

ব্যবসায়ী শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী পিংকি সরকারের পিতা অভিভাবক ভবিচার বকুল সরকার জানান, মেয়ের রেজাল্ট ভাল থাকলেও সরকারি কলেজ ভেবে এ কলেজে মেয়েকে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষক সংকটে কলেজের অবস্থা এমন হবে ভাবিনি। তিনি জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ভেবে ও কলেজের সুনাম ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান।

কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মমতাজ হোসেন মন্ডল বলেন, ‘কলেজটিতে বর্তমানে ৭জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। জাতীয়করণ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এসকল শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কোন হাত নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। ইংরেজী বিভাগের কোন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোন রকমে চালাচ্ছি ওই বিভাগের পাঠদান। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে কলেজটি জাতীয়করণ হলেও আজ পর্যন্ত কলেজের শিক্ষক জাতীয়করণের আওতায় আসেনি। কোন সুযোগ সুবিধাও পায়নি তারা। কাগজ-পত্র যাঁচাই-বাছাই এ দীর্ঘ সময় ক্ষেপনে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আর এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কলেজের শিক্ষক সংকট নিরসনে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের কিছু করার নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে সংশ্লীষ্ট বিভাগ।