ঢাকা | এপ্রিল ৩০, ২০২৫ - ১১:২১ অপরাহ্ন

রাজশাহী অঞ্চলে মালচিং পদ্ধতিতে সবজী চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

  • আপডেট: Tuesday, March 15, 2022 - 10:01 pm

এম এম মামুন, মোহনপুর থেকে: মালচিং মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বর্তমানে বাংলাদেশেও পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু হয়েছে। রাজশাহীর প্রধান সবজি উৎপাদিত পবা, মোহনপুর, বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, পাতা কপি। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজির বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বেশি হওয়ায় ও ফলন দাম ভালো পাওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদিত সকল সবজিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়তই উদ্ভাবন করছে পরিবেশবান্ধব নানা প্রযুক্তি ও পদ্ধতি। সেই পরিবেশ বান্ধব কৃষি প্রযুক্তির মধ্যে একটি মালচিং পদ্ধতি। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে অধিক পরিমাণে শ্যালো মেশিন ব্যবহারের কারণে পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। তাই প¬াস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে বাঁচানো যায় পানির অপচয়। এছাড়া উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়। ফলে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহী অঞ্চলেও দিনে দিনে মালচিং পদ্ধতিতে সবজী চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

মালচিং বা আচ্ছাদন পদ্ধতিতে চাষাবাদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ‘মালচ’ কথার অর্থ মাটি ঢেকে দেওয়া। মূলত পুরানো, শুকনো বা কাঁচা পাতা, বিচালি বা খড়, কচুরিপানা ইত্যাদি দিয়ে মাটি ঢেকে দেওয়ার পদ্ধতিই হলো মালচিং যা আগের থেকেই আমাদের দেশে চালু আছে। কিন্তু কৃষিতে আধুনিকীকরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে প¬াস্টিক মালচিং-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটি আধুনিক চাষাবাদের একটি উন্নত পদ্ধতি। এর ফলে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। তাছাড়া, ভালো ফলনের জন্য মাটি ঢেকে দিয়ে আবাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করা হয়।

পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের সবজি চাষি ইনছান আলী বলেন, ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। কারণ প¬াস্টিক মালচিং ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা ওই প¬াস্টিকের আবরণে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। যা বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। এতে জমিতে দু’টি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে অর্থাৎ সেচের খরচ কম হয়। সেচ বা বৃষ্টির পানি শুধুমাত্র প¬াস্টিকের ফুটো করা অংশ দিয়ে শিকড়ের কাছের অংশের মাটিতে প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে পানির যথাযথ ব্যাবহার ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়।

মোহনপুর উপজেলার পরিজুনপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় পূর্বে এ পদ্ধতি না থাকলেও বর্তমানে সবজি ক্ষেতে অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষ করছে। প¬াস্টিক মালচিং এ যেহেতু ফুটো করা অংশ দিয়ে গাছ বেরিয়ে আসে। মাঝের ঢাকা অংশ থেকে আগাছা বের হতে পারে না। প্লাস্টিক যদি কালো রঙের হয় তবে সূর্যালোক ঢুকতে পারে না। ফলে সালোক সংশ্লেষণ করতে না পারায় মাঝের অংশের আগাছা মারা যায়। ফলে আগাছা নাশকের জন্য শ্রমিকের খরচ কমে যায়।

কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, মালচিংয়ের ফলে পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিমাটোড বা ফসলে কৃমির আক্রমণ রোধ হয়। পলিথিন জাতীয় এ সীটের উপরের রঙ সিলভার এবং নিচের রঙ কালো। সিলভার রঙ হওয়ায় সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয় ফলে পোকা বসতে পারে না। গাছে পোকা ধরে কম। এই পদ্ধতি ব্যবহারে শিকড়ের কাছের স্থানে সার প্রয়োগ করার জন্য চাষে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সংখ্যাও অনেক কমে যায়। ফলে খরচ কমানো সম্ভব হয়।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS