ঢাকা | মে ১, ২০২৪ - ১০:১৪ অপরাহ্ন

এই যেন অন্য রকম এক প্রেম কাহিনী

  • আপডেট: Tuesday, March 15, 2022 - 3:46 pm

অনলাইন ডেস্ক: প্রেম-ভালোবাসার বহু শ্বাশত কাহিনী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি হাসপাতালের বেডে এই বছরের ৯ মার্চ রাতে আরেক ভালোবাসর অমর উপাখ্যান রচনা করল হাসান ও ফাহমিদা।

চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে।

শিক্ষাজীবনে তাদের দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভাল লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পরে। ভালবাসার মায়াবী বন্ধনে হয়ে উঠে দুজন দুজনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নেবিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখ চোখের কোনায়।

কিন্তু একি এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। সপেদ আকাশ মেঘে ঢাকা বৈরী ঝড়ো হাওয়া সব তচনচ করে দিতে উদ্যত। ফাহমিদার স্বপ্নরাঙা মায়াবী শরীরে বাসা বাধে মরণব্যাধি ক্যান্সার। ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেয়- ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।

পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে।

ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট, যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চান। কপালে হাত রেখে বলতে চান- আমি আগের মত এখনো তোমার পাশে আছি। তুমিই আমার জীবন, তুমিই আমার সব। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চান। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।

এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন হাসান। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল সে সহসা ফাহমিদাকে বিয়ে করবে। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর ব্যর্থচেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি।

অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ রাতে মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালাবদল হয়। খেজুর, মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ক্ষণিকের জন্য মরণব্যাধি ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠেন অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিনগুলো আবার যেন ফিরে পান।

ফাহমিদা কামালের নিকটাত্মীয় মো. সাইফুদ্দিন সাকী জানান, শিক্ষাজীবনেই মাহমুদুল হাসান এবং ফাহমিদা কামালের পরিচয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তারা। ২০২০ সালে হঠাৎ ফাহমিদার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়লেও চকরিয়ার ছেলে হাসান ছায়ার মতো সব সময় তার পাশে ছিলেন।

তিনি বলেন, ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা হাসান নিতে পারছিলেন না। মানসিক প্রশান্তি দিতে তিনি ফাহমিদাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে রাজি না হলেও হাসানের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে পরে দুই পরিবার রাজি হয়। এক টাকা দেনমোহরে ৯ মার্চ রাতে হাসপাতালেই তাদের বিয়ে হয়।

সাকী বলেন, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ফাহমিদার লাল বেনারসি পরা হাসি মুখ দেখে আমরা আপ্লুত। ক্যান্সারে আক্রান্ত নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে হাসান প্রমাণ করেছেন জীবনের চেয়ে প্রেম বড়। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা- যেন অলৌকিক কিছু হয়। হাসান-ফাহমিদার বন্ধন যেন অটুট থাকে।

সোনালী/জেআর