ঢাকা | মে ১১, ২০২৫ - ৪:৪২ পূর্বাহ্ন

শিক্ষকেরা কাঁদলেন, ছাত্রদেরও কাঁদালেন

  • আপডেট: Sunday, March 13, 2022 - 10:36 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা শুধু বাড়িতেই বসে থাকেন। তাদের হাতে গড়া অনেক শিক্ষার্থী দেশবরণ্য হয়েছেন। অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। শিক্ষকেরা পথ চেয়ে থাকেন, যদি প্রিয় কোনো ছাত্র একদিন তঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাদের সেই আশা কমই পুরণ হয়। এমন অর্ধশতাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের জন্য গত শনিবার একটি ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আলোকছত্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।

সেখানে দুজন শতবর্ষী শিক্ষকও ছিলেন। ছাত্ররা পরম শ্রদ্ধায় তাদের মঞ্চে বসিয়ে পা ধুয়ে দিলেন। শিক্ষকেরা শুধু কাঁদলেন, ছাত্রদেরও কাঁদালেন। ‘সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ’ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘তোমার আলোয় আলোকিত।’

গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া, আলোকছত্র, বিলাসী, পলাশী ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামেই রয়েছেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ৬৭ জন শিক্ষক। সকাল ১০টা থেকেই শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেন। তাদের জন্য টি-শার্ট ব্যাগ ও উত্তরীয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। একজন শিক্ষক আসার সঙ্গে সঙ্গে সেই শিক্ষকের একজন ছাত্র তার সঙ্গে লেগেছিলেন। তার কখন কী লাগবে, তার খাওয়ার ব্যবস্থা করা- সবকিছুর জন্যই ছিলেন ওই ছাত্র।

বিকেলে তিনটা পর্যন্ত শিক্ষকেরা চাকরিজীবনের স্মৃতিচারণা করেন। তিনটায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক আলোকছত্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি ফারুক হোসেন। এই পর্বে উদ্বোধনী আলেখ্য পরিবেশন করা হয়, যার সঙ্গে কোরিওগ্রাফি করেন নৃত্যশিল্পী ল্যাডলী মোহন মৈত্রেয় ও আলো মৈত্রেয়। এর মাধ্যমে ওই এলাকায় যাঁরা শিক্ষার আলো ছড়িয়েছিলেন তাদের কথা তুলে ধরা হয়।

মঞ্চে বসিয়ে শতবর্ষী শিক্ষক আব্দুল করিম ও আহাদ আলী সরকারের পা ধুয়ে দেন তাদের কৃতী ছাত্র রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সয়াইবুর রহমান খান, ব্যবস্থাপক মো. সেতাউর রহমান খান ও শিক্ষক মো. শফিউর রহমান। উপস্থাপক মনিরা রহমান তখন ঘোষণা করেন এই দুই শিক্ষকের পা ধুয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উপস্থিত সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হলো। তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শতবর্ষী দুই শিক্ষক কাঁদতে থাকেন। অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই চোখে মুছতে থাকেন।

আব্দুল করিম বললেন, জীবনের এই শেষ সময়ে এসে নিজের প্রিয় ছাত্রদের মুখ দেখতে পেয়েই প্রাণটা জুড়িয়ে গেছে। তারা আবার পা ধুয়ে শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানানোর একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। শিক্ষকের এই সম্মান চিরদিন অটুট থাকুক।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সংস্কৃতি গবেষক ইকবাল মতিন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এমন বিরল অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। তিনি বেহালা বাজিয়ে দেশে বিদেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। সঙ্গে করে বেহালাটা নিয়ে গিয়েছিলেন। কথা শেষে শিক্ষকদের বেহালা বাজিয়ে শোনান।

অনুষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য যশোরের গদখালী থেকে আনা হয়েছিল জারবেরা ও গোলাপ ফুল। ফুল এনেছিলেন যশোরের মেয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফা জাহান। তিনি একগাদা ফুল নিয়ে মঞ্চে উঠে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের এমন আয়োজনের খবর জানতে পেরে আমি যশোর থেকে ফুল নিয়ে এসেছি। নিজের হাতে আমি ফুলগুলো আপনাদের দিতে চাই।’ মঞ্চ থেকে নেমে আরিফা শিক্ষকদের হাতে হাতে ফুল তুলে দেন। এতে শিক্ষকেরা খুবই খুশি হন।

শিক্ষকদের জন্য টি-শার্ট ও ‘মজিদ স্যার’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন রাজশাহী শহরের কবি মোস্তাক রহমান। অনুষ্ঠানে কবিতাটি পাঠ করে শোনান সাংবাদিক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কবি ও পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী, আইনজীবী লায়েব উদ্দিন, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান, বিশ্ব পর্যটক তানভীর অপু, রাজশাহীর ‘রসগোল্লা’র স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল, মাছ বড়শি গ্রন্থের লেখক আকিব, অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল, কাঁকনহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল মজিদ প্রমুখ।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS