ঢাকা | মে ১৮, ২০২৪ - ২:০৮ অপরাহ্ন

সংলাপে যে পরামর্শ দিলেন শিক্ষাবিদরা

  • আপডেট: Sunday, March 13, 2022 - 7:43 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া শিক্ষাবিদরা। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পাওয়া সাবেক আমলারা সরকারের সুবিধাভোগী হওয়ায় তারাও সুষ্ঠু ভোট করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছেন তারা।

রবিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন শিক্ষাবিদরা।

বৈঠক সূত্র জানায়, সংলাপে বিগত নির্বাচনে রাতে ভোট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ। সামনের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে হয় সেজন্য রাজনৈতিক সমঝোতায় গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এছাড়াও নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক রদবদল, ইভিএম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার পরামর্শ এসেছে সংলাপে।

বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছেন, সংলাপে দেওয়া পরামর্শ পর‌্যালোচনা করে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর করণীয় ঠিক করবেন।

এর আগে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, অতীতে বেশ কিছু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য আগামী নির্বাচন যেন অধিকতর অংশগ্রহণমূলক হয়, প্রকৃত অংশীদারিত্বমূলক হয়- সে লক্ষ্যে সবার মতামত নিচ্ছে কমিশন।

নির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়াই এই সংলাপ শুরু করেছে কমিশন। এরপর ২২ মার্চ নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপে বসবে। পরে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও সংলাপ হবে।

সংলাপে উঠে আসা মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বৈঠক শেষে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে টেকনোলজি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার পরামর্শ দিয়েছেন।

সংলাপে ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত ১৫ জন উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

জাফর ইকবাল বলেন, ইভিএম এটা টেকনোলজির ব্যাপার। টেকনোলজির শিক্ষকদের নিয়ে বসে বিষয়টা অ্যানালাইসিস করা যেতে পারে। এখন অনেক নতুন টেক এসেছে। যেমন ব্লক চেইন। এখানে এই সমস্ত ব্যাপারকে একদম ফুলপ্রুফ করে দেওয়া হয়। ইভিএম নিয়ে সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মানুষের সঙ্গে বসতে হবে। ওনারা কনভিন্স হলে জাতিকে বলতে পারবেন, ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নাই, এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ।’

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে হলে নির্বাচন ইনক্লুসিভ হতে হবে, সবাইকে এখানে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা সেটা দেখছি না। সবাই নির্বাচনে আসছেন না এমন একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে আনার জন্য সমঝোতা ব্যাপারটাতে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে বলি, আপনারা এসে সমঝোতা করেন, যাতে নির্বাচনে সবাই যোগ দিতে পারে। কমিশন আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে লেখালেখি করতে বলেছে।’

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল এমনটা জানিয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, আমাদের সাজেশন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচন যেন স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক এবং অংশগ্রহণমূলক হয়- এ কথাই আমরা বলেছি। নির্বাচনে সহিংসতা যেন না হয়। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কীভাবে যুক্ত করা যায় সে কথা আমরা বলেছি।’

আরপিও অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী থাকার বিষয়েও তিনি কথা বলেন।

নির্বাচনকালীন সরকারে সবাই পদে থেকে কীভাবে স্বচ্ছ নির্বাচন করা যাবে তা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

সংলাপে যোগ দিয়ে চবি শিক্ষক ইয়াহিয়া আকতার বলেন, ‘আপনাদের কমিশনের তিনজন সাবেক আমলা, সরকারি সুবিধাভোগী, আপনারা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন? দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

গত সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোটের বাক্সের ব্রেকফাস্ট বা নাস্তার টাইম হচ্ছে সকাল আটটা, খাবার হচ্ছে ব্যালট। কিন্তু গত নির্বাচনে এই বাক্স ব্রেকফাস্ট না করে সেহেরি খেয়েছে।

সংলাপে ইয়াহিয়া বলেন, বর্তমান সিস্টেমে আপনারা ভালো নির্বাচন করতে পারবেন না। হয় দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করুন, না হয় আগের কমিশনের মতো দায় নিয়ে বিদায় নিন। আরেকটা কাজ করতে পারেন, সেটা হচ্ছে পদত্যাগ করে সম্মান বাঁচানো। আমরা ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করেছি, আরেকবার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে এমন কিছু ক্ষতি হতো না।

ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক রদবদল অবশ্যই করতে হবে। আগের ইসি রফিকুল ইসলাম নির্বাচনের আগে বললেন, প্রশাসনিক রদবদল করা হবে না। ওটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম।

এছাড়াও সংলাপে অংশ নেন আবদুল মান্নান চৌধুরী, ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মফিজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, আখতার হোসেন, আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, জাফর ইকবাল, বোরহান উদ্দিন খান এবং লায়লাফুর ইয়াসমিন।