ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ৯:০২ অপরাহ্ন

শিক্ষকদের বদলির প্রতিবাদে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট: Sunday, March 13, 2022 - 10:32 pm

স্টাফ রিপোর্টার: নার্গীস আখতার বানু প্যারালইজডে আক্রান্ত। তিনি রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁকে বদলি করা হয়েছে ঢাকার একটি স্কুলে। নার্গীস আখতারের ভাগ্য একটু ভালই বলতে হয়। তিনি বদলি হয়ে রাজধানীতে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজশাহীর শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোস্তফা কামালের ভাগ্য অতটা ভাল নয়। তাঁকে পাঠানো হয়েছে বান্দরবানের লামা সরকারি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এভাবে রাজশাহী শহরের ছয়টি সরকারি স্কুলের অন্তত ২৭ জন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। বান্দরবান, ভোলা, নোয়াখালী, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় তাঁদের বদলি করা হয়েছে। বেশিরভাগকেই বদলি করা হয়েছে বান্দরবানে। এই বদলি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাও।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যাঁদের বদলি করা হয়েছে তাঁদের প্রত্যেকেরই বয়স ৫৫ বছরের বেশি। কারও কারও চাকরি আছে আর মাত্র এক থেকে দুই বছর। এই বয়সে রাজশাহী অঞ্চলের কোন স্কুলে বদলি করা হলেও তাঁরা মেনে নিতেন। কিন্তু তাঁদের পাঠানো হয়েছে একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এমন বদলি মেনে নিতে না পেরে রাজশাহীর সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের একজন শিক্ষক স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চেয়েছিলেন। অনেক বুঝিয়ে তাঁকে থামানো হয়েছে।

গত ৮ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আমমেদ এক আদেশে সারাদেশের ২৬১ জন শিক্ষককে বদলি করেন। এ আদেশে রাজশাহী মহানগরের ছয় স্কুলের ১৭ জন শিক্ষক আছেন। তাঁদের দূর-দূরান্তে বদলি করা হয়েছে। একই দিন মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী মহানগরের আরও ১০ জন শিক্ষককে বদলি করেন। মাউশির এক চিঠির প্রেক্ষিতেই তাঁদের এ বদলি করা হয়। বদলি করা শিক্ষকদের ১২ মার্চের মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়। আগের দিন শিক্ষকরা স্কুল থেকে ছাড়পত্র নিতে শুরু করলে শিক্ষার্থীরা বদলির বিষয়টি জানতে পারে।

এর পর দিন শনিবার রাজশাহী মহানগরের সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। পরদিন রোববারও নগরীর সাহেববাজার এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এতে লেখা ছিল, ‘আমার শিক্ষকের চোখে পানি কেন?’, ‘শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি মানি না, মানব না’, ‘আমাদের শিক্ষক আমাদেরই থাকবে’। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বদলি আদেশ স্থগিতের দাবি জানায়।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের বিষয়ে শহরের দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে নাম প্রকাশ করে তারা কোন বক্তব্য দিতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে এই ধরনের কোন বদলি আমি দেখিনি। রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষকরা এ অঞ্চলেই থাকবেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাঠিয়ে লাভ কি? ওই এলাকায় তো সেখানকারই শিক্ষক রাখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলি স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক শিক্ষকের চাকরি আর দু’এক বছর আছে। এই বয়সে এত দূরে বদলি করাটা অযৌক্তিক। এতে শিক্ষকেরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।’ এর প্রভাব পাঠদানে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। ওই শিক্ষক দাবি করেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের পদায়ন করতে পুরনোদের বদলি করা হচ্ছে।

তবে এটি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘এই বদলি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হয়েছে। অনেক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট ছিল। আবার অনেক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক অতিরিক্ত শিক্ষক ছিলেন। স্কুল থেকেই এ তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট কাটাতে যে স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক ছিলেন সেখান থেকে বদলি করা হয়েছে।’ এই বদলি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।