ঢাকা | ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ - ৬:১৫ অপরাহ্ন

সিরাজগঞ্জে শীতল পাটিতে স্বপ্ন বুনছেন নারীরা

  • আপডেট: Saturday, March 12, 2022 - 9:58 pm

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে: গরমে শান্তির পরশ পেতে শীতল পাটির জুড়ি মেলা ভার। গরমের সময়ে কদর বাড়ে কামারখন্দের শীতল পাটির।সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার একটি গ্রাম শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। শীত শেষে গরমের আবির্ভাবের শুরুতে শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটি কারিগররা। গরমের কয়েক মাস শীতল পাটির কদর বাড়ে। তাই কাজের ব্যস্ততাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায় কয়েক গুন।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধরা শীতল পাটি বুনছেন। আগের তুলনায় শীতল পাটির কদর কম হলেও থেমে নেই তাদের পাটি বুননের কাজ। শীতল পাটি বুনে তাদের সংসার চলে। শীতল পাটিতে রঙিন স্বপ্ন বুনেন তারা।

পাটি শিল্পের কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বহুকাল ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কামারখন্দের শীতল পাটি সমাদৃত হয়ে আসছে। এখানকার মুর্তাবেতির শীতল পাটির চাহিদাও প্রচুর। এ গ্রামের মানুষ শীতল পাটি বুনে তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন।বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোক শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পাটি শিল্প। তীব্র তাপেও খুব গরম হয় না বলেই এই পাটিকে শীতল পাটি বলা হয়।

পাইত্রা মুর্তা নামে এক ধরণের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কান্ড থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ক পাটি গাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে তার পর পাটির বেতি তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি জ্বাল দেয়া হয়। এর ফলে বেতি হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতির উপরের খোলস থেকে শীতল পাটি পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ চিকন দড়ি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে কামারখন্দ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ গ্রামের মানুষ জমিতে মুর্তা বাগান করে বিক্রি করেছেন ও তা দিয়ে নিজেরা পাটি তৈরি করে আসছেন কয়েক শত বছর যাবত। এখানে শীতল পাটি, নামাজের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়।

৮০ বছর বয়সী শ্যাম সুন্দর ছোট বেলা থেকে তৈরি করে আসছেন এ শীতল পাটি। তিনি বলেন, শীতল পাটি তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। বাবা দাদারা পাটি বুনতেন। তাদের দেখে এ পেশায় জড়ান। তিনি আরো বলেন, এক সময় শীতল পাটির খুব কদর ছিলো। তাদের কাছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসতো। অনেক পাইকাররা তাদের থেকে পাটি ক্রয় করে নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতেন। এখনও তাদের শীতল পাটির কদর পুরো দেশ জুড়ে রয়েছে।

এ গ্রামের যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। করোনার সময় চাকরী চলে যায় তখন বাড়িতে এসে বাপ দাদাদের পেশাই বেছে নিয়েছি।’

শ্রীমতি আদুরী রানী নামে এক বৃদ্ধা জানান, ‘ছোট বেলা থেকে পাটি বুনে আসছি। একজন মেয়ে সপ্তাহে দুটো পাটি বুনতে পারে যার বাজার মুল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এখন আমাদের শীতল পাটির কদর আগের মতো নাই। সরকারী ভাবে সহযোগীতা করা হলে এ শিল্প টিকে থাকবে।’