ঢাকা | ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ - ১০:২১ পূর্বাহ্ন

সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী

  • আপডেট: Thursday, March 10, 2022 - 9:24 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী আইনজীবী বার সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের। এই প্যানেলের ২১ প্রার্থীর কেউই জয়ী হতে পারেননি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সব প্রার্থীই জয় পেয়েছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে ২০২১ সালের নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন। অথচ ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে নির্বাচিত হয়েছিল সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। এবারের নির্বাচনে কী কারণে পরাজয় ঘটেছে তার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখেনি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। তবে ব্যক্তিগতভাবে পরিষদের কেউ কেউ নানা কথা বলছেন।

তবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আইনজীবী পরিষদ মনে করছে, সর্ষের মধ্যেই ভূত ঢুকে পড়েছে। তাই পরাজয় ঘটেছে নির্বাচনে। তাদের বক্তব্য, রাজশাহীর বিভিন্ন আদালতে সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। গতবছর নিয়োগ পাওয়া এই ১১২ জন সরকারি আইন কর্মকর্তার মধ্যে অন্তত ৩০ জন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয় বলেও অভিযোগ তুলেছে ওয়ার্কার্স পার্টি আইনজীবী পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন এক সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। তাকে ‘হাইব্রীড’ও বলেছিলেন তিনি। মোজাফফর হোসেন রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দুই সদস্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন।

এর প্রতিবাদেই সংবাদ সম্মেলন করে ওয়ার্কার্স পার্টি আইনজীবী পরিষদ। আইনজীবী সমিতির বঙ্গবন্ধু কর্নারে করা এই সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী মোজাফফর হোসেনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন আইনজীবী সুশান্ত সরকার। উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, আইনজীবী মামুনুর রশীদ জন, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ডলার, আইনজীবী আরাফাত কবীর প্রমুখ।

সুশান্ত সরকার বলেন, ‘কেন আমরা বিজয় অর্জন করতে পারিনি তার জন্য নির্বাচন পরবর্তী সমন্বয় পরিষদভুক্ত কোন দল, সমিতি এবং সমর্থিত সদস্যদের অংশগ্রহণে পরাজয়ের কারণ মূল্যায়ন হয়নি। সমন্বয় পরিষদের ভোট পরবর্তী মূল্যায়ন বৈঠকের আগেই সম্মিলিত আইজীবী পরিষদের ঐক্য ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চক্রান্তকারীদের পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যদের অভিযুক্ত করে নিজের পদ-পদবী রক্ষায় সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এটা নিজ দায়িত্বে অবহেলা ও ভোটে ষড়যন্ত্র করার বহিঃপ্রকাশ এবং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল। একজন সরকারি আইন কর্মকর্তার নিজ আত্মসমালোচনা না করে দোষারোপ করা নিজের দৈন্যতা প্রকাশ।’

সুশান্ত সরকার বলেন, ‘এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ সরকারি আইনজীবীদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন আওয়ামী আইনজীবী সদস্য নয়। তারা ১৪ দলের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় এমনকি তারা এবং তাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবার। এদের গোপন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এই নির্বাচনে আইনজীবী মোজাফফর হোসেনের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক। কারণ, ১১২ জন সরকারি আইন কর্মকর্তাদের সংগঠিত করে তিনি কখনই ভোটের প্রচারে অংশগ্রহণ করেননি। এটি না করার বিষয়টি বার সমিতির সদস্যদের নিকট দৃশ্যমান ছিল। ১১২ জন সরকারি আইন কর্মকর্তারা সংগঠিতভাবে সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদের পক্ষে কাজ করলে হয়তোবা আমাদের এই পরাজয়টা হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ১১২ জন সরকারি আইন কর্মকর্তার একটি তালিকা আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়। তালিকা প্রাপ্তির মাত্র ১০ দিন পর ওই বছর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা আস্বস্ত ছিলাম যে, ১১২ জন আইন কর্মকর্তারা যদি ভোটে কাজ করেন তাহলে আমরা প্যানেলের ২১টি পদে বিজয়ী হবো। কিন্তু ২১ পদের মধ্যে আমরা ২০টি পদেই পরাজিত হয়েছিলাম। এবারেও একই ঘটনার পুনারাবিত্তি ঘটেছে। সেটা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির ভরাডুবি অত্যন্ত লজ্জার এবং দুঃখজনক।’

নির্বাচনে সরকারি আইনজীবীদের সংগঠিত না করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমি মিটিং ডেকে সরকারী আইনজীবীদের বলেছি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেলে ভোট দেওয়ার জন্য। কিন্তু ১০-১৫ জন সেক্রেটারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তাদের নাম এসেছে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি তারা এক চুলও আওয়ামী লীগ থেকে সরব না। হাইব্রীডরাই আমাদের ভরাডুবির জন্য দায়ী। এখনও বলছি।’