মঞ্চে অনুশীলনের ‘নায়ক ও খলনায়ক’
স্টাফ রিপোর্টার: ‘নবাব সিরাজ দৌলার প্রধান সেনাপতি ছিল মীর জাফর, খোন্দকার মোস্তাক ছিল বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীপরিষদ সদস্য। যুগে যুগে এই ঘরশত্রু বিভীষণেরা বেঈমানি করেছে, কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র কখনওই সফল হয়নি। যারা দেশ ও মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী-স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তারা যে দল বা যে ব্যবস্থারই প্রতিনিধি হোক না কেন, তাদের পরিচয় একটাই, তারা হলো খলনায়ক। মনে রাখবেন, অন্ধকার কখনও সত্যর আলোকে নিভিয়ে দিতে পারে না। খলনায়কেরা কখনওই প্রকৃত নায়কদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
এই কথাগুলো ‘নায়ক ও খলনায়ক’ নাটকের শেষ সংলাপ। এই সংলাপ থেকেই নাটকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা ইঙ্গিত মেলে। নাটকটি রচনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যজন মলয় ভৌমিক। তাঁর নির্দেশনাতেই শনিবার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ করে অনুশীলন নাট্যদল।
‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর, আমরা চলেছি সামনে’ স্লোগানে রাজশাহী থিয়েটার আয়োজিত ষষ্ঠ অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় নাট্যোৎসবের চতুর্থ দিন নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। অনুশীলন নাট্যদলের এটি ৬৪তম প্রযোজনা। করোনা পরিস্থিতির কারণে টানা দুই বছর পরে অনুশীলনের এই নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হলো অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় নাট্যেৎসবে।
নাটকের সংগীত পরিচালনা করেছেন শৌভিক রায়। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ল্যাডলী মোহন মৈত্র। মঞ্চসজ্জা করেন মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ও কনক কুমার পাঠক। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের এ নাটকটিতে অভিনয় করেন রাকিবুল আলম, স্বাধীন খান, রিমন বিশ্বাস, হৃদয় সাহা, তানজিনা মাহাজাবীন, রেজুয়ানুল হক, মোশাররফ হোসেন, কঙ্গনা সরকার, সুব্রত হালদার, আরিফুল ইসলাম মেহেদী হাসান ও হৃদয় তালুকদার।
নাটকটিতে ঐতিহ্যবাহী বাংলানাট্যের আঙ্গিকের সাথে সর্বাধুনিক আঙ্গিকের মিশেলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নাটকটি ইতিহাসের পাঠ নয়। তবে অবাস্তবানুগ রীতিতে নির্মিত কল্পিত এই নাটকটি দর্শককে ইতিহাসের কথাই স্মরণ করিয়ে দেবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়োজিদ পুরো নাটকটিই উপভোগ করেন। শেষ সংলাপ শেষ হতেই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিনয়শিল্পীদের অভিবাদন জানান অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। পরে মঞ্চে গিয়ে তিনি নায়ক ও খলনায়কের নাট্যকার মলয় ভৌমিককে ফুলের শুভেচ্ছা জানান।
নাটক শেষ হলেও তখনও মিলনয়াতনভরা দর্শক। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে উপাচার্য বললেন, ‘আমাদের নাটক দেখার লোক বাড়ছে। এটা খুব আশা জাগাচ্ছে।’ কামাল বায়োজিদ বললেন, ‘ঢাকা থেকে এসেছি শুধু এই নাটকটি দেখার জন্য। আসলেই আমাদের তাড়িয়ে দিতে হবে খলনায়কদের। নায়কের যেন স্থান হয় বাংলাদেশে।’