রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি নিয়ে শঙ্কায় মালিকরা
অনলাইন ডেস্ক: বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান। রাশিয়ার একটি বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্ডার পেয়েছিলেন ছয় মাস আগে। সেজন্য তিনি আগাম ৩০ শতাংশ পেমেন্টও নিয়েছেন। গত সপ্তাহে তার এক কনটেইনার তৈরি পোশাক পাঠানোর কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় তিনি পণ্য পাঠাননি।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এভাবেই পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে। রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কার।
ইতিমধ্যে দেশের অনেক পোশাক কারখানা পণ্য জাহাজীকরণ করেও তা রাশিয়ায় পাঠানো থেকে বিরত থাকছেন। কেননা অর্থ লেনদেনের প্রধান আন্তর্জাতিক মাধ্যম সোসাইটি ফর ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত শিগগির কার্যকর হওয়ার কথা।
লেনদেনের সমস্যার শঙ্কায় এমনকি দেশের সর্ববৃহৎ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লেনদেনও আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল আসা অব্যাহত থাকবে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শঙ্কা কাটানোর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে অর্থ লেনদেনে বিকল্প উপায়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বেলজিয়ামভিত্তিক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন নিষ্পন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সুইফট।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অংশ হিসেবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও তাদের মিত্ররা।
পোশাকশিল্পের মালিকরা জানান, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থ লেনদেনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় তাদের অনেকে আগের অর্ডার অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করার পরও তা পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি পণ্যের ৯৫ শতাংশই যায় তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে।
এ বছর রাশিয়ায় ১০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির টার্গেট করেছিলেন পোশাকশিল্পের মালিকরা। তারা মনে করছেন, এখন তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
প্রতিবেদনের সূচনায় বন্দরনগরের যে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক মোস্তাফিজুর রহমানের কথা বলা হয়েছে, তিনি পণ্য পাঠানোর জন্য অনুকূল পরিস্থিতির অপেক্ষা করছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘একদিকে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানটি তাকে কিছু জানাচ্ছে না। অন্যদিকে পুরো পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’ তাই পণ্য পাঠানো থেকে আপাতত বিরত রয়েছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমানের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের অনেকেই রাশিয়ায় পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর ধরে রাশিয়ায় তাদের পোশাকপণ্য রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। গত বছর তারা রপ্তানি করেছিলেন ৬০ কোটি ডলারের মতো।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘রাশিয়ায় রপ্তানি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থ লেনদেনে বিকল্প উপায় বের করতে তারা মালিকরা বাংলাদেশের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দুই দিন ধরে আলোচনা চালাচ্ছি।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘যারা পণ্যের শিপমেন্ট (জাহাজীকরণ) করে ফেলেছে বা শিপমেন্ট করার প্রক্রিয়ায় আছে, তাদের পেমেন্টটা বিকল্প পথে কীভাবে আনা যায়, সে কাজগুলো আমরা করছি।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৬০ কোটি ডলার।