এক সময় রাজশাহীসহ দেশজুড়েই সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল পাতকুয়া। চলমান উন্নয়ন ধারায় পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। শহরে এখন পাইপ লাইনের পানি আর গ্রামাঞ্চলে গভীর-অগভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে।
ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। পাতকুয়া শুকিয়ে গেছে। নদী,পুকুর, খাল-বিলের বেশিরভাগই ভরাট হয়ে গেছে। নলকূপের পানিতেও আর্সেনিক দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব হুমকি সৃষ্টি করেছে পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়।
এ অবস্থায় গভীর নলকূপের সেচে কৃষি বিপ্লবের প্রবক্তারা পথ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) পাতকুয়ার প্রচলন তারই প্রমাণ। রাজশাহীর পদ্মার চরে এর মধ্যেই পাঁচটি পাতকুয়া স্থাপন করেছে বিএমডিএ।
চরমাজারদিয়াড়ে সৌর বিদ্যুৎ চালিত এসব পাতকুয়া থেকে চাষিরা মাত্র ২০ টাকায় এক ঘণ্টা পানি পাচ্ছেন। এ পানি দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে সেচ দেয়া যায়। চরে পাতকুয়া থেকে এক ঘণ্টার সেচ খরচ ২০ টাকা হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএর বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ থেকে পানি নিতে ঘণ্টায় চাষিদের খরচ হয় ৮৫ থেকে ১২৫ টাকা। এখানে অবশ্য পানির চাপ বেশি থাকে।
এক একটি পাতকুয়ার পানিতে ২০ থেকে ২২ বিঘা জমির ফসল চাষাবাদ করা যায়। সকালে সূর্য ওঠা থেকে সন্ধ্যায় সূর্য ডোবা পর্যন্ত সোলার প্যানেলের বিদ্যুত সরবরাহকৃত পানিতে প্রতি ঘণ্টায় ১০ কাঠা জমিতে সেচের খরচ মাত্র ২০টাকা। সব মিলিয়ে বড় পাতকুয়ায় ব্যয় হয় ২৫ লাখ টাকা, ছোটতে ১৪ লাখের মত। এই পানিতে চাষাবাদ ছাড়াও গৃহস্থালি ও নাগরিক প্রয়োজনও মিটে থাকে। এখন চরের প্রায় সাত থেকে আট হাজার মানুষ ব্যবহার করছে এই পানি। ফলে কৃষির পাশাপাশি জনজীবনেও সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাতকুয়া ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
শুধু রাজশাহীতে পদ্মার চরেই নয়, অন্যান্য চরাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সারাদেশেই সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাতকুয়ার প্রচলন সামগ্রিক পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা গেলে, প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংস্কার করে বর্ষার পানি ধরে রাখা শুরু হলে পাতকুয়ার ব্যবহার জনপ্রিয় হতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উন্নতিও ঘটবে।
সোনালী/এমই