পিকে হালদার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৬ মামলা, তিনটিতে অভিযোগপত্র
অনলাইন ডেস্ক: প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে দেশ ছেড়ে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক।
নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাত, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে এই মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামিদের মধ্যে অভিযুক্ত হিসেবে ডজনখানেক ব্যক্তি গ্রেপ্তার আছেন। যারা কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ঢাকাটাইমসকে জানান, পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে তিনটিতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। বাকি ৩৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা হয় ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি। রেড এলার্ট জারির ষোল মাস পর তাকে ভারতে দেশটির অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট—ইডির হাতে গ্রেপ্তারের খবর এল। তার সঙ্গে ধরা পড়েছেন পাঁচ সহযোগীও।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতের ইডি অভিযান পিকে হালদারকে ধরেছে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পিকে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পিকে হালদারকাণ্ডে তিনি ও তার সহযোগীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে পিকে সিন্ডিকেটের ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের মধ্যে ১১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিয়েছেন।’
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পিকে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। ৬৪ জনের বিদেশ গমনে আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। আর এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
২০২০ সালে ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন ও আত্মসাতের পিকে হালদারে বিরুদ্ধে মামরা করে দুদক। একই বছরে ভুয়া পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা হয়।
এছাড়া ২০২১ সালে দশটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভুয়া ঋণপত্র দেখিয়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুদক ১০টি মামলা অনুমোদন করে।
১০ মামলা থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৪৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ও ৩০৬ কোটি টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে আরও চারটি মামলা রজু করা হয়।
১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ
বিভিন্ন হিসাবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের কথা বলা হলেও দুদকের কাছে দেওয়া বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য থেকে জানা যায়, চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পিকে হালদার সরিয়েছেন ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বিএফইইউর তথ্যমতে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস) থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরান পি কে হালদার চক্র।
গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ১৩ আসামি
পি কে হালদারের অর্থ পাচারের সহযোগী ১৩ জনকে এখন পর্যন্ত দুদক গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন শংখ বেপারি, পিকে হালদারে বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই, পিকে হালাদারের আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সম্নেট ডিরেক্টরেট (ইডি) পিকে হালদার ও তার স্ত্রী ও ভাইসহ মোট ছয়জনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে।
পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।