ঢাকা | মার্চ ২৮, ২০২৪ - ৩:২২ অপরাহ্ন

সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঢাকায় তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী

  • আপডেট: Saturday, May 7, 2022 - 10:11 pm

অনলাইন ডেস্ক:  এ বছরের এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকায় মোট ১৩১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৬ জন। শুধুমাত্র রাজধানীতে ২২ দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়াও সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ।

শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, গত এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ৫৪৩ জন এবং আহত ৬১২ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭, শিশু ৮১। ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭.৯৩ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৪.২৬ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২১.৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন, অর্থাৎ ১৬ শতাংশ। এ সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৬ জন (৩৭.৯৩ শতাংশ), বাস যাত্রী ১৩ জন (২.৩৯ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৬৩ জন (১১.৬০ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ জিপ যাত্রী ১৪ জন (২.৫৭ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক) ১০০ জন (১৮.৪১ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম) ১৯ জন (৩.৪৯%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১২ জন (২.২০ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৭টি (৪৩.৭৯ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৩টি (২৮.৮০ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৫টি (১৫.৪২ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৬টি (১০.৭৭ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি (১.৪০ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর ৮৪টি (১৯.৬৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৭টি (৩৯.১১ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৩টি (২৬.৪৬ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৫২টি (১২.১৭ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২.৫৭ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ৩০.১১ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-তেলবাহী ট্যাংকার-গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্যাঙ্কার ৬.২০ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ জিপ ৪.৭৫ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১০.৪৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-শিশুক) ১৫.৩২ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-ডাম্পার) ৫.৬৮ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১.৪৫ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৫৭টি। (ট্রাক ১৪৪, বাস ৭৯, কাভার্ডভ্যান ২৬, পিকআপ ৫৮, ট্রলি ৯, লরি ১০, ট্রাক্টর ১৭, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৩, গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্যাঙ্কার ১, ডিএনসিসির ময়লাবাহী ট্রাক ১, ড্রামট্রাক ৭, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৩, পুলিশ জিপ ১, মোটরসাইকেল ১৯৭, থ্রি-হুইলার ১১৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-শিশুক) স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-ডাম্পার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১১ টি।

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৪.২১ শতাংশ, সকালে ৩২.৫৫ শতাংশ, দুপুরে ১৮.৫০ শতাংশ, বিকেলে ২০.৬০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০.৭৭ শতাংশ এবং রাতে ১৩.৩৪ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০.৬৭ শতাংশ, প্রাণহানি ২৮.৭২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩.০৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪.১২ শতাংশ, প্রাণহানি ২২.০৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৭৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১০.৮৬ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৩৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৪.৬০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.০৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৩২ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৩৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৮৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.১৮ শতাংশ ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশের ৪ সদস্য, সেনা সদস্য ১ জন, র‌্যাব সদস্য ১ জন, বিজিবি সদস্য ১ জন, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ২ জন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৩, চিকিৎসক ২, সাংবাদিক ৩, আইনজীবী ৪, প্রকৌশলী ২, সংগীত শিল্পী ১, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৯, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩১, পোশাক শ্রমিক ৭, চালকল শ্রমিক ২, ইটভাটা শ্রমিক ৪, ধানকাটা শ্রমিক ৬, মাটিকাটা শ্রমিক ৪, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১২ এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

রোড সেফটি জানায়, সড়ক দুর্ঘটনায় গত এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন নিহত হয়েছে। মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৯ জন। এ হিসাবে মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে প্রাণহানি কমেছে ৪.৭৩ শতাংশ। তবে এটা উন্নতির কোনো টেকসই সূচক নির্দেশ করছে না। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৩১ জন, অর্থাৎ ৭৯.৩৭ শতাংশ।

ট্রাক-সহ পণ্যবাহী দ্রুতগতির যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বেড়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ চালকদের বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী যানবাহন চালানো এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে, পাশাপাশি অন্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। পথচারী নিহতের ঘটনাও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।

এই আতঙ্কজনক প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।