ঢাকা | এপ্রিল ২০, ২০২৪ - ৩:১৩ পূর্বাহ্ন

পৌরসভায় অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা

  • আপডেট: Thursday, March 31, 2022 - 1:42 pm

অনলাইন ডেস্ক: পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে নির্বাচনের আগে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। স্থানীয় সরকার পৌরসভা সংশোধন বিলে থাকা এই ধারাটি বাদ দেওয়ার দাবি জানান তারা।

তবে আলোচনার পর বিলটি পাস হয়।

বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, যেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত বলা হচ্ছে, সেখানে পৌরসভায় অনির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়োগ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সংসদের অধিবেশনে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা এসব কথা বলেন। বিল পাসের সময় বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ ওয়াকআউট করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পৌরসভায় যে পানি সরবরাহ করা হয়, তা নিম্নমানের। পানির যে দাম ধরা হয়, তা অনেক বেশি। আমার নির্বাচনী এলাকায় পৌরসভার পানির দাম আশপাশের এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। আমি সমন্বয় করার কথা বলেছি। কিন্তু তারা বলে আমাদের কিছু করার নেই।

বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যান্সারে আক্রান্ত। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বিরাট অংশ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। সরকার কার্ড বিতরণ করছে, আওযামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বলছেন, আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা কার্ড পাবে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা বলছেন, আমাকে যারা ভোট দিয়েছে তারা কার্ড পাবে। অনির্বাচিত ব্যক্তিকে পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বসানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এটা বাকশালি সিস্টেম। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসাবেন এতে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। ডিসি, ইউএনওরা এখন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালন করেন। জনগণকে পালন করতে বাধ্য করা হয়।

মেয়াদ শেষ হলে কেন আপনাদের মনোনীত প্রতিনিধি বসবে প্রশ্ন তুলে হারুনুর রশিদ বলেন, আপনারা নির্বাচন করেন। প্রত্যাহার না করলে ওয়াক আউট করবো। এর পর আইন পাসের সময় তিনি ওয়াক আউট করেন।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধির মেয়াদ শেষে একজন সরকারি প্রশাসক বসানোর কথা বলা হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন অনির্বাচিত সরকার করতে পারবে না সেখানে পৌরসভায় অনির্বাচিত প্রশাসক বসানোর কথা বলছেন। এটা ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া চাকরি শেষে পৌরসভার কর্মচারীরা তাদের পেনশন পান না। তারা যাতে পেনশন পান সে ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, অনির্বাচিত প্রতিনিধি বসানো হলে এটা হবে জনগণের রক্তক্ষরণ আইন। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। যেখানে আমরা বলছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত সরকার। সেখানে পৌরসভায় একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো এটা সাংঘর্ষিক। পৌরসভার কর্মচারীরা বেতন, পেনশন পান না, বাকি থাকে। এগুলো বাস্তব সমস্যা। পেনশন সরকার থেকে দেওয়া উচিত, পৌরসভার হাতে রাখা উচিত না।

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের উত্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সক্ষম ও কার্যকর করার চেষ্টা করছি, এর জন্য আমরা আইন সংশোধনের উদ্যোগও নিয়েছি। জনকল্যাণকর করার জন্য কাজ করছি। পৌসভার নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। আইনে বলা আছে, প্রশাসক ১৮০ দিনের অধিকাল দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। আমার মনে হয় এতে আপনাদের আশঙ্কা দূর হবে। তার জন্য আইনে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বেতন ভাতার যে অভিযোগ করা হয়েছে, এটা পূর্বের অবস্থা। এখন এই অবস্থা নেই। কোনো পৌরসভায় বেতন বাকি নেই। প্রশাসক নিয়োগে যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। আইনের জটিলতার কারণে এটা যৌক্তিক। যিনি প্রশাসক হবে তার অধীনে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

বিল পাসের পর এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া উচিত, এটা আমরাও চাই। আমাদের এটাই লক্ষ্য, বঙ্গবন্ধুরও লক্ষ্য ছিল। দোহার পৌরসভায় একজন ১৮ বছর আছেন, মামলা করে বহাল রয়েছেন। এই আইনে পরিষ্কার বলা আছে, ১৮০ দিনের বেশি প্রশাসক থাকতে পারবেন না, এটা বর্ধিত করা যাবে না। এর পরও বিএনপির হারুনুর রশিদ ওয়াক আউট করলেন, একটা স্ট্যান্ডবাজি করে দিলেন।

সোনালী/জেআর