ঢাকা | এপ্রিল ২০, ২০২৪ - ৬:৪৭ অপরাহ্ন

দুর্গাপুর লালপুর গোমস্তাপুর মান্দা ও নাচোলে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি

  • আপডেট: Saturday, March 19, 2022 - 10:30 pm

সোনালী ডেস্ক: পাঁচ উপজেলায় অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দুর্গাপুরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক পানবরজ পুড়ে ছাই হয়েছে। লালপুরে আগুনে পুড়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। গোমস্তাপুরে দোকানসহ বসতবাড়ি ভষ্মিভূত হয়েছে। মান্দায় আগুনে পুড়েছে তিনটি বসতবাড়ি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মশা তাড়ানোর ধোয়া থেকে একটি গরুর খামারে আগুন লেগে ২৭টি গুরু পুড়ে মারা গেছে।

দুর্গাপুর প্রতিনিধি জানান, দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে কৃষকের প্রায় শতাধিক পানেরবরজ। গতকাল শনিবার দুপুর একটার দিকে বরজের পাশে একটি বাড়ির রান্নাঘরে আগুনের সুত্রপাত হয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট স্থানীয় জনগনের সহায়তায় আড়াই ঘন্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তাঁর আগেই কৃষকের অর্ধ কোটি টাকার পানের বরজ পুড়ে গেছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী পানচাষিরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিবপুর গ্রামের একব্যক্তির বাড়ির রান্নাঘরে শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার সময় আগুন লাগে। সেখান থেকে পাশ্ববর্তী পানবরজে গুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শত শত গ্রামবাসী পানবরজ রক্ষার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা দেঁড়টার দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। সবার প্রচেষ্টায় আড়াই ঘন্টাপর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তাঁর আগেই ৪০বিঘা জমিতে প্রায় শতাধিক পানবরজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী পানচাষি মান্নান, ইসলাম, আশরাফুল জানান, চৈত্র মাসে পানের দাম বাড়ে। তাই কৃষকরা চৈত্রমাসের আসায় বরজে বরজে বিপুল পরিমাণ পান গচ্ছিত রাখে। কিন্তু পানবিক্রির আগেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শতাধিক পানবরজ। এতে কৃষকের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

দুর্গাপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের টিম লিডার মাহাবুর রহমান বলেন, আড়াই ঘন্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৪০বিঘা জমির ওপর শতাধিক পানবরজ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অগ্নিকান্ডে পানচাষিদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাঁর একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, নাটোরের লালপুরে আগুনে একটি বাড়ির তিনটি ঘর পুড়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলার জোতদৈবকী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী জোতদৈবকী গ্রামের মৃত মমজেদ শেখের ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকেলে তার ও ছোট ভাই রাজন ইসলামের তিনটি ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে গেছে। এ সময় তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

লালপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, বিকেল চারটার দিকে উপজেলার জোতদৈবকী গ্রামে একটি বাড়িতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস দল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গোমস্তাপুর উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের নাদেরাবাদ বাচ্চামারি গ্রামের বাসিন্দা জসিমউদ্দীনের বাড়িতে আগুন লেগে বসতবাড়িসহ দোকান ভষ্মিভূত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিদ্যুতের সর্টসার্কিট থেকে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে বসতবাড়ি তিনটি ঘর ও একটি কীটনাশক ওষুধের দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমান ৯ লক্ষ টাকা বলে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রাথমিক তথ্যসূত্রে জানিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক জসিমউদ্দিন জানান, কোন কিছু বোঝার আগেই আগুন বাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির সঙ্গে থাকা কীটনাশক দোকানের মালামাল থেকে বেশি আগুন ছড়ায়। তিনটি ঘর ও কীটনাশক দোকান একেবারেই পুড়ে গেছে। বাড়িসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের সঙ্গে দোকানের মালামাল ও দেড় লক্ষাধিকের উপর টাকা পুড়ে গেছে বলে তিনি জানান।

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, মান্দায় রান্নাঘরের চুলা থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে গেছে তিনটি বসতবাড়ি। শনিবার দুপুরে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের মুল্লিকপুর গ্রামে অগ্নিকান্ডের এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের আফাজ উদ্দিনের বাড়ির রান্নাঘরের চুলা থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তে তা পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পাশের হাসেম আলী ও আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িও পুড়ে যায়। সংবাদ পেয়ে মান্দা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের একটি ইউনিট ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

গৃহকর্তা আফাজ উদ্দিন জানান, চুলায় রান্না উঠিয়ে দিয়ে তাঁর স্ত্রী বাইরে যান। এরপর কিছুর পরেই রান্নাঘরে থাকা খড়িতে আগুন ধরে যায়। মুহুর্তে তা পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ধান, চাল, রসুন, পেঁয়াজসহ বাড়ির সমুদয় মালামাল পুড়ে গেছে। আগুনে তিন পরিবারের ১০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মান্দা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের রিডার শফিউর রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আগুনে তিন পরিবারের দুই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো ও নাচোল প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মশা তাড়ানোর ধোয়া থেকে একটি গরুর খামারে আগুন লেগে ২৭টি গুরু পুড়ে মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলার নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের আখিলা গ্রামের সলেমান আলীর খামারে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে খামারের ৩টি ষাঁড় গরু, ২২টি শাহীওয়াল বকনা গরু ও ২ টি বাছুর গরু আগুনে পুড়ে মারা যায়।

নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মিন্টু রহমান জানান, গরুর খামারে মশা তাড়ানোর ধোঁয়ার আগুনের সাথে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং দ্রুত তা পুরো খামারে ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ওই খামারের ২৭ টি গরু পুড়ে মারা যায়। যার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

নাচোল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার ইব্রাহিম আলী জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ওই খামারের গরু ছাড়া আর কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও জানান, মশা তাড়ানোর ধোয়ার আগুনের সাথে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগে হয়ে এই আগুনের সূত্রপাত।