ঢাকা | এপ্রিল ২৫, ২০২৪ - ৬:০৪ অপরাহ্ন

নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারীর পরিচয় জানাল র‍্যাব

  • আপডেট: Monday, October 10, 2022 - 2:12 pm

অনলাইন ডেস্ক: জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম অর্থ সরবরাহকারীর নাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩২) বলে জানিয়েছে র‍্যাব। কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এ ছাড়া তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন।

র‍্যাব আরও বলেছে, হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষ্যংছড়িতে তিনি প্রায় দুই বছর ধরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তাঁর মাদ্রাসায় রাখতেন। এ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন।

অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ হাবিবসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তিনজন রয়েছেন। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বাকিরা হলেন নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত (২৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম।

র‍্যাব আরও বলেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে উগ্রবাদী পাঁচটি পুস্তিকা, প্রায় ৩০০ লিফলেট এবং পাঁচটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কীভাবে অন্যদের জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ করতেন, তা জানিয়েছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তার নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় প্রদান করতেন। গ্রেপ্তার হোসাইন পেশায় একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি এবং রংমিস্ত্রি।

তিনি এক বছর ধরে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। তিনি হোসাইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হন । উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাস আগে নিরুদ্দেশ হন। আর সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তিনি গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হন। তিনি নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এ সংগঠনে জড়িত হন।

গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর থেকে আট তরুণ নিখোঁজ হন। তদন্তে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা ঘর ছেড়েছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় চারজন তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‍্যাব। ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামের এক ব্যক্তি রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।

র‍্যাব বলছে, শারতাজের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তিনজন, নিরুদ্দেশ চার তরুণসহ মোট সাতজনকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১০–এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব আরও বলছে, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ জনের বেশি। তারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিলেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেছে র‍্যাব।

সোনালী/জেআর