ঢাকা | এপ্রিল ২০, ২০২৪ - ৪:৪৩ অপরাহ্ন

সেই রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে এখন পাঁচজন গেটম্যান

  • আপডেট: Saturday, August 13, 2022 - 3:55 pm

অনলাইন ডেস্ক: গেল ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের রেলক্রসিংয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১৩ জন। সেই দুর্ঘটনাস্থলের রেলক্রসিংয়ে এখন দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন গেটম্যান। এই গেটের জন্য মোট পদ ৩টি পদ থাকলেও আগে দায়িত্বে ছিলেন ২ জন।

দায়িত্ব পালন করা পাঁচ গেটম্যান হলেন- মেহরাব, সাগর, নকুল দাস, রিপন ও সুভাস। দুর্ঘটনার দিন ১২ ঘণ্টা করে শিফটিং দায়িত্বে ছিলেন সাদ্দাম। তিনি গেট দিয়ে বা খোলা রেখে জুমার নামাজে গিয়েছিল।

দুর্ঘটনার পর রেলক্রসিংয়ে ৩ জন গেটম্যানের স্থলে অতিরিক্ত আরও ২ জন দেয়া হলো। কিন্তু এমন আরও অনেক দুর্ঘটনাপ্রবণ রেলগেট রয়েছে যেখানে তিনটি পদের মধ্যে ২ জন করে দায়িত্ব পালন করছেন। যা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে অবৈধ রেলক্রসিং আছে তিন শতাধিক। বৈধ রেলক্রসিং ১৩৭টি। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় চারশতের বেশি রেলক্রসিং আছে। কিন্তু বৈধ রেল ক্রসিংয়ের প্রতিটি ক্রসিংয়েই নেই পর্যাপ্ত লোকবল। প্রতি গেটে তিনজন করে গেটম্যানের পদ থাকলেও ৮টি গুরুত্বপূর্ণ ও এনালগ গেটে ২ জন করে দায়িত্ব পাল করছেন। অথচ এসব গেটে ন্যূন্যতম ৪ জন করেই প্রয়োজন বলে মনে করে সচেতন মহল।

পরিবহন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট বৈধ ক্রসিং রয়েছে প্রায় ১৩৭টি। এর মধ্যে স্পেশাল লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১৭টি। এছাড়া আটটি ‘এ’ শ্রেণির, ৩২টি ‘বি’ শ্রেণির, ৭৩টি ‘সি’ শ্রেণির ও সাতটি ‘ডি’ শ্রেণির ক্রসিং রয়েছে। পূর্বাঞ্চলের মোট ৫৭টি স্পেশাল শ্রেণির লেভেল ক্রসিং প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বড় জেলা শহরভিত্তিক। নড়বড়ে ক্রসিং অবকাঠামো ও লোকবলের অভাবে এসব ক্রসিংয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

জুলাই-২০২১ পর্যন্ত হালনাগাদ করা একটি তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে গেটকিপারের মঞ্জুরীকৃত পদ ২৪২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছে ১৫৭ পদে, বাকি ৮৫টি শূন্যপদ।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান রেলক্রসিংয়ে সঙ্কট কাটাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী গেটম্যান।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের শহর থেকে গ্রামের বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে অন্তত ৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গেল বছরের ৩০ আগস্ট সীতাকুণ্ডের এয়াকুব নগরের অবৈধ রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-পিকআপভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর কদমতলী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-সিএনজির সংঘর্ষ, ২০ সেপ্টেম্বর পটিয়ার আউটার সিগন্যাল এলাকায় পিডিবির তেলবাহী ট্রেনের সাথে নসিমনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, ৩০ নভেম্বর ফৌজদার হাটে সংঘর্ষের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেস। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কদমতলী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-প্রাইভেটকার ও ট্রেন-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষের পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গেল ডিসেম্বরে নগরের খুলশী ঝাউতলা রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে রেলের মী সরাই অঞ্চলের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা বলেন, সীতাকুণ্ড থেকে ফেনী পর্যন্ত আমার এলাকা। এই এলাকাকে নিরাপদ রাখতে আমি শূন্য ৮টি পদের জন্য লোকবল চেয়েছি। আশা করছি শিগগিরই এর সমাধান হবে।

খৈয়াছড়া ঝরনা রেলক্রসিং: দুর্ঘটনার পর মীরসরাইয়ের এ রেলক্রসিংয়ে আগের চিত্র বদলে গেছে। এখন দু’এক মিনিট থেমে এদিক ওদিক দেখে সতর্কভাবে পার হচ্ছে যানবাহন। শনিবার বেলা ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সরেজমিন অবস্থান করে দেখা গেছে, লেভেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যান সবুজ সিগন্যাল দিলেও ডান-বাম না দেখে কোন যানবাহনই রেলক্রসিং পার হচ্ছে না। নিজেরা ঠিকঠাক দেখে নিশ্চিত হয়ে তারপর পার হচ্ছে। অনেক যানবাহন সিগন্যাল পাওয়ার পরও দু’এক মিনিট থেমে দুদিকে দেখে নিয়ে সতর্কভাবে রেলক্রসিং পার হচ্ছে।

এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, যদি এমন সচেতন হতো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। আমরা শুধু বিপদে পড়লেই সচেতন হই। এর আগে হুশ থাকে না।

খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের দায়িত্বে থাকা সুভাস চন্দ্র দাস বলেন, দুর্ঘটনার আগে এমনটি ছিলো না। আর এখন পারাপারের সবুজ সিগন্যাল দেয়ার পরও দু’দিক না দেখে ক্রসিং পার হচ্ছে না কোন যানবাহন।

সোনালী/জেআর