সিরাজগঞ্জে ৩ লৰাধিক মানুষ পানিবন্দি
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: যমুনার পানি কমে বিপদসীমার ৫৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জেলার ৫টি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৮ হাজার পরিবারের তিন লৰাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকায় বেঙে যাওয়া রিং বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে বাঁধে আশ্রয় নিলেও সেখানেও করুণ অবস্থা। টিনের চালা বা পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কুকুরের সাথে একঘরে রাত কাটাতে হচ্ছে। বাঁধে টিউওয়েবল না থাকায় পানির সঙকটও দেখা দিয়েছে। টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় আশ্রয় নেয়া মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে নারীরা পড়েছেন মহাবিপদে। রান্না করার খড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো রান্নাও করতে পারছেন না। আর বৃষ্টি হলে এসব অসহায় মানুষ দুভোর্গ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে বসতবাড়ি ৩-৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ঘর-বাড়ির নষ্ট হয়ে পড়েছে। আসবাবপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পানিতে নষ্ট আর ভেসে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষ ৰতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আর সার্বৰণিক পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘাসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে। রোজগার না থাকায় ওষুধ কিনেও খেতে পারছে না অসহায় মানুষগুলো। ভাঙন কবলিতদের নিজস্ব জায়গা জমি না থাকায় ওয়াপদার ঢালে ঘরবাড়ি স্তূপ করে রেখেছে। এ সকল মানুষ পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন।
অন্যদিকে বাহুকা চারদিন পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ভাঙা অংশ সংস্কার করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। দ্র্বত বাঁধ শক্তিশালীকরণ কাজ শুরু করা হবে। বর্তমানে এসব এলাকায় আর কোন আতঙক নেই।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদরের বাহুকায় নদীতীর সংরৰণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া রিং বাধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। সোমবার সকালে পরিদর্শনের পর গণমাধ্যমকর্মীদের মন্ত্রী বলেন, বন্যায় নদী এলাকার আশপাশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এবং নিরাপত্তায় থাকতে পারে, সরকার সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর যারা নদীতীরে এবং বাঁধের অভ্যন্তরে বসবাস করে বন্যার সময় তাদের কিছুটা সমস্যা সইতে হবে। এই এলাকার মানুষকে নদীর ভাঙনের হাত থেকে রৰায় সিমলা থেকে খুদবান্দি পর্যন্ত এলাকায় সাড়ে ৪ শ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাধ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একনেক মিটিংয়ে প্রকল্পটি পাস হওয়ায় পর এ বছরই প্রকল্পের কাজ শুুরু করা হবে। পাশাপাশি ভাঙন কবলিত রিং বাধ ও তৎসংলগ্ন পুরাতন নদীতীর সংরৰণ বাধও আরও শক্তিশালী করা হবে। আর বাধ নির্মাণে পাউবো’র যদি কোন গাফিলতি থাকে সেটি বিভাগীয় ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। পরিদর্শনকালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বীর প্রতিক, মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন, রাজশাহী জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, বগুড়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল শিং, সিরাজগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক আবু ইউসুফ সূর্য, জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ ও সিরাজগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৩ দিন চেষ্টার পর বাহুকা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ রিং বাঁধের ভাঙা অংশে সংস্কার করে রোববার সন্ধ্যায় পানি প্রবাহ বন্ধ করে পাউবো ও সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাঁধটির ২০ মিটার এলাকা যমুনার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে মুহূর্তের মধ্যেই তা লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরপর রাত ২টা থেকে পাউবো এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ৪৫ সদস্যের একটি টিম ভাঙন স্থানে বাশের পাইলিং, বালি ভর্তি জিওব্যাগ ও পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে ভাঙন স্থান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। বাঁধ ভাঙার কারণে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করায় ১০ হাজার মানুষ, রাস্তাঘাট, স্কুল, মাদ্রাসা, বসতবাড়ি ৰতিগ্রস্ত হয়।