ঢাকা | এপ্রিল ২৪, ২০২৪ - ১:৩৫ পূর্বাহ্ন

চালের বাজার বিশৃঙ্খল

  • আপডেট: Thursday, June 2, 2022 - 11:06 am

অনলাইন ডেস্ক: চাল ব্যবসায়ী অনেকেই দামের তালিকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ দামের তালিকা প্রদর্শনই করেননি। অনেকের ব্যবসার নেই বৈধ লাইসেন্স। কারও থাকলেও সেটার মেয়াদ নেই। আবার বেশি লাভের আশায় কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত রেখেছেন।

বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি স্থানে চালের বাজারে অভিযান চালিয়ে এমনই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চিত্র দেখতে পেয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এসব অপরাধে ঢাকার সাত প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ও মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সংশ্নিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এখন ধানের ভরা মৌসুম চলছে। ফলে চালের দাম থাকার কথা হাতের নাগালে। কিন্তু বাজারে সেই চিত্র দেখা যায়নি। বরং কয়েকদিন ধরে দাম বাড়ছে। গতকাল কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। মোটা চালের কেজিতেও বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ মজুত ঠেকাতে মাঠে নেমেছে সরকার। একযোগে সারাদেশে চালের বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর, বাবুবাজার, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর এলাকায় চালের দোকানে অভিযান চালানো হয়। মূলত ব্যবসায়ীদের ফুড গ্রেইন সনদ রয়েছে কিনা এবং অতিরিক্ত মজুত করা হয়েছে কিনা সেসব বিষয়ে তদারকি করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেরই লাইসেন্স ছিল না। কারও কারও থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। সাধারণত ধান ও চালের ব্যবসা করার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ফুড গ্রেইন সনদ নিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই সনদ ছাড়া কেউ দোকানে পাঁচ মণ চালও রাখতে পারবে না।

দোকান রেখে পালালেন ব্যবসায়ীরা :কারওয়ান বাজারে অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মর্জিনা আক্তার। তিনি বলেন, অভিযানের খবর শুনে চাল ব্যবসায়ী অনেকেই দোকান থেকে পালিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ীর ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছিল না। যাঁদের রয়েছে তাঁদের নবায়ন করা নেই। তবে অবৈধ মজুত পাওয়া যায়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হুরে জান্নাতের নেতৃত্বে আরেকটি অভিযান চালানো হয় হাতিরপুল বাজারে। কোনো চাল দোকানের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এখানেও অভিযানের খবর পেয়ে অনেক দোকানি পালিয়েছেন।

বাবুবাজার এলাকায় অভিযান চালান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই-একটা দোকানে সনদ পাওয়া যায়নি। তবে মজুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

মোহাম্মদপুর টাউন হল ও কৃষি মার্কেটে অভিযানে অংশ নেওয়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, অনেকেরই সনদ ছিল না। সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীর কাজলা ও কলাপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান চালান অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল ও শরিফুল ইসলাম। তাঁরা জানান, অনেক ব্যবসায়ী চালের দামের তালিকা প্রদর্শন করেননি। কেউ কেউ দামের তালিকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এছাড়া ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা ও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার কারণে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে কাজলার কুতুবদিয়ার মুছা রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার, খাদ্য ভান্ডারকে ৫০ হাজার, কাজী ট্রেডার্সকে ২০ হাজার, কলাপট্টি এলাকার হাজী নয়ন ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার ও করিম রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই দিন মিরপুরে শাহ স্মৃতি মার্কেটের চালের আড়তে অভিযান চালিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিধিনিষেধের আওতায় প্যাকেটজাত কোম্পানি :গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বেড়েছে। আকিজ, সিটি, এসিআই, স্কয়ার, বসুন্ধরা, প্রাণ- এ ৬টি গ্রুপের কাছে অতিরিক্ত চাল মজুত পাওয়া গেছে। যেসব কোম্পানি প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করবে, তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল কিনতে পারবে না- এমন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, এছাড়া গুদামে অতিরিক্ত চাল পাওয়া গেলে সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং গুদাম সিলগালা করা হবে। এসব অপরাধে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।

ঢাকার বাইরে :ঢাকার বাইরে দিনাজপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার টনের বেশি চাল জব্দ করা হয়। চট্টগ্রামে চার আড়তদার, সিলেটে ৫ প্রতিষ্ঠানকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই দোকানিকে ও বরিশালে তিন আড়তদারকে জরিমানা করা হয়। ফরিদপুরে দুই ব্যসায়ীকে জরিমানা ও ৪০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো কুষ্টিয়ার খাজানগর চাল মোকামে অভিযান চালিয়ে বড় কোনো মজুত ও অনিয়ম মেলেনি। বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বগুড়ার আদমদীঘিতে দুই মিল মালিককে জরিমানা ও একটি সিলগালা, ধুনটে একটি এবং শিবগঞ্জে চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। হবিগঞ্জে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও বন্ধ করা হয় একটি। নাটোরের সিংড়ায় এক হাজার টন ধান মজুত রাখায় একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

সোনালী/জেআর